Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে কী বার্তা দিচ্ছে

Icon

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০৫ পিএম

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে কী বার্তা দিচ্ছে

ফিলিস্তিনের গাজা নিয়ে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলছে। আর এই বিক্ষোভ ইসরায়েলকে সমর্থন করা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রজন্মগত মতপার্থক্যকে সামনে নিয় আসছে। দেশজুড়ে আন্দোলন করে দেশটির তরুণ প্রজন্ম রাজনীতিবিদদের ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষগুলোকে ইসরায়েলকে সমর্থনের বিষয়ে চ্যালেঞ্জ জানাতে চান। বিশ্লেষকদের বরাতে এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। 

বিশ্লেষকেরা যুক্তি, ফিলিস্তিনিদের ব্যাপারে আগের প্রজন্মের চেয়ে বর্তমান প্রজন্ম বেশি সহানুভূতিশীল। প্রজন্মগত এই মত পার্থক্য দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের (৮১) পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনায় ঝুঁকি তৈরি করেছে। শুধু তাই নয় এই মত পার্থক্য ওয়াশিংটনের দুই দল (রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট) থেকে ইসরায়েল যে সমর্থন পেয়ে আসছিল তার জন্যও হুমকিস্বরূপ।   

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ওমর ওয়াশো বলেন, ইসরায়েলের ব্যাপারে ইতোধ্যেই আমরা প্রজন্মগত মতপার্থক্য দেখতে পাচ্ছি। ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য এটি দীর্ঘমেয়াদি একটি ইস্যু হতে চলেছে। চলমান বিক্ষোভ ওই মতপার্থক্যকে আরও জোরালো করেছে।

ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে গত সপ্তাহে ক্যাম্পাসে অস্থায়ী ক্যাম্প করেছেন নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। তাদের বিক্ষোভ দমনে পুলিশ ডেকেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর সংঘর্ষ হয়। গ্রেপ্তার করা হয় শতাধিক শিক্ষার্থী। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা বিভাগীয় শাস্তির মুখোমুখিও হচ্ছেন। এসব সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে একই রকম ক্যাম্প গড়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। 

‘বিভক্তির মুহূর্ত’

শিক্ষার্থীরা মূলত দাবি করছে, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ কোথায় কতটাকা বিনিয়োগ করেছে তা প্রকাশ করা এবং ইসরায়েলকে সরবরাহ করা অস্ত্রের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেন বিনিয়োগ না করে ও বিনিয়োগকৃত তহবিল ফিরিয়ে আনা। 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের পাশাপাশি হোয়াইট হাউস ও ইসরায়েলপন্থী গোষ্ঠীগুলোর অভিযোগ, শিক্ষার্থীরা ইহুদি–বিদ্বেষ উসকে দিচ্ছেন। যদিও বিক্ষোভকারীরা দ্ব্যর্থহীনভাবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এমান আবদেলহাদি ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর সমাজবিজ্ঞানী। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতির অপরিবর্তনশীল অবস্থায় দেশটির তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্রমেই হতাশা বাড়ছে। তিনি বলেন, আমি মনে করি, পুরোনো প্রজন্মের ব্যাপারে তাদের সত্যিকার অসন্তোষ রয়েছে। তবে যা আরও গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, পুরোনো প্রজন্মের চালু রাখা ব্যবস্থার প্রতি তাদের অসন্তোষের বিষয়টি।

এমান আবদেলহাদি বলেন, শিক্ষার্থীদের এ বিক্ষোভ মার্কিন জনমতে ‘বিভক্তির মুহূর্ত’কে আরও বিস্তৃতভাবে তুলে ধরেছে। সাধারণভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বড় ছাত্র বিক্ষোভ চলাকালে বা এর জেরে জনমতে এক বড় পরিবর্তন আসতে দেখা গেছে। দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনের ভিত্তি হয়ে উঠতে পারে ক্যাম্পাসের এ বিক্ষোভ। কম–বেশি এমন একটা ধারণা আছে, এ বিক্ষোভই দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে।

বাইডেনের দুশ্চিন্তা

গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে চালানো বিভিন্ন জনমত জরিপে দেখা গেছে, তরুণ প্রজন্ম ফিলিস্তিনিদের প্রতি বেশ সহানুভূতিশীল এবং ইসরায়েলের প্রতি সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি লালন করে। সার্বিকভাবেও মার্কিনদের মধ্যে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের আচরণ, বিশেষ করে গাজায় দেশটির চলমান যুদ্ধ নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব বেড়েছে।

একাধিক জনমত জরিপ ইঙ্গিত দিচ্ছে, জরিপে অংশ নেওয়া মার্কিনদের বড় অংশ গাজা উপত্যকায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠাকে সমর্থন করেন। গত ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নারকীয় তাণ্ডব শুরুর পর এখন পর্যন্ত সেখানে ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের বেশিরভাগ নারী ও শিশু। ইসরায়েলের আগ্রাসনে উপত্যকার বড় অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে।

এ নৃশংসতা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইসরায়েলকে দৃঢ় সমর্থন দেওয়া অব্যাহত রেখেছেন। এমন অবস্থান ৮১ বছর বয়সী এ প্রেসিডেন্টের জন্য হয়ে উঠতে পারে রাজনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল। কেননা, আগামী নভেম্বরে পুনর্নির্বাচনী দৌড়ে সম্ভাব্য রিপাবলিকান প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখোমুখি হতে হবে তাকে।

জরিপের ফলাফলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে, নির্বাচনে জিততে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ডেমোক্রেটিক পার্টির ঘাঁটি ধরে রাখতে হবে। কিন্তু ইসরায়েলকে সমর্থন করা নিয়ে সেখানকার ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ঐক্য রিপাবলিকানদের মতো সুসংহত নয়।

অ্যাঙ্গাস জনস্টন যুক্তরাষ্ট্রে ছাত্র বিক্ষোভের ঘটনার একজন ঐতিহাসিক। তিনি বলেন, ইসরায়েলকে নিয়ে প্রজন্মগত বিভাজন বিশেষ করে ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে সুস্পষ্ট। জাতীয় পর্যায়ে আমরা এ বিভাজনকে ডেমোক্র্যাট দলের তরুণ ভোটার ও অধিকাংশ রাজনীতিকের মূল্যবোধের মধ্যে একধরনের বিচ্ছিন্নতার রূপে দেখেছি। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও প্রশাসকদের মধ্যে একই রকমের বিচ্ছিন্নতা দেখছি। অ্যালামনাই ও দাতাদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালনা করেন এই প্রশাসকেরা।

পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের দলীয় রাজনীতিতে নিজেদের জড়াচ্ছেন না। এর পরিবর্তে তারা ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার রক্ষায় সহায়তা করার তাদের দাবিতে জোর দিচ্ছেন।

স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে, মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন আনা ও যুক্তরাষ্ট্রকে ‘গণহত্যা থেকে বিচ্ছিন্ন’ রাখার দাবি পূরণে বিক্ষোভকারীরা সক্ষম হবেন কি না।

এ বিষয়ে ঐতিহাসিক জনস্টন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইসরায়েলকে সহায়তাকারী ওই সব বড় প্রতিষ্ঠান ও প্রতিরক্ষা খাত থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করবে—সম্ভবত এটি স্বল্প সময়ে হবে না। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোয় বিনিয়োগে স্বচ্ছতা আনার দাবি যৌক্তিক। দীর্ঘমেয়াদে পরিবর্তন আনা সম্ভব। কিন্তু তা রাতারাতি হবে না।

তিনি বলেন, আমরা বারবার দেখেছি, ছাত্র বিক্ষোভ পররাষ্ট্রনীতিতে বদল এনেছে। তবে তা সব সময় দ্রুত আনেনি। আবার, শিক্ষার্থীরা যেভাবে চেয়েছেন, সেভাবেও সব সময় আসেনি।

অনুসরণ করুন