Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

এখন কেন বাঙালি মুসলমানদের মন গলাতে চাইছে বিজেপি

Icon

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:০০ পিএম

এখন কেন বাঙালি মুসলমানদের মন গলাতে চাইছে বিজেপি

বিজেপির প্রচারণা নিয়ে আলোচনা করেন বাঙালি মুসলিম যুবকরা। ছবি: স্ক্রল .ইন

ভারতে লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট আজ (শুক্রবার) শুরু হয়েছে। আসামের নওগাঁও লোকসভা আসনে ভোট দিয়ে রাব্বুল ইসলাম আজই ট্রেনে চেন্নাই ফিরে যাবেন। সেখানে তিনি একটি গাড়ি মেরামতের দোকানে কাজ করেন। ৩০ বছর বয়সী রাব্বুল আসামের ব্রহ্মপুত্র পাড়ে অবস্থিত সুতার গাঁও এলাকার বাসিন্দা। এই গ্রামের বেশিরভাগ বাসিন্দা বাঙালি বংশোদ্ভূত মুসলমান। বছরের পর বছর ধরে বন্যা এবং নদী ভাঙন তাদের জীবন-জীবিকাকে প্রভাবিত করেছে। তাই বাধ্য হয়ে এখানকার তরুণরা গ্রাম ছাড়ছে।

ঈদ উদযাপনের পাশাপাশি লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিতে রাব্বুলসহ অনেক পরিযায়ী শ্রমিক সুতার গাঁওয়ের নিজেদের গ্রামে আসেন। গত ২৩ এপ্রিল সুতার গাঁও বাজারে অন্য শ্রমিকদের সঙ্গে ক্যারাম খেলছিলেন রাব্বুল। রাব্বুল বলেন, গত দুই বছরে পাঁচ শতাধিক পরিবার নদী ভাঙনে তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে। সরকার আমাদের রক্ষার জন্য কিছুই করেনি। বাড়িঘর ও জমির ফসল হারানোর পর খেয়ে পরে বাঁচতে শহরে চলে যাই।

এই বাজারে ২২ এপ্রিল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) একটি জনসভা করেছিল। ক্যারাম খেলার পাশাপাশি ওই জনসভা নিয়ে কথা হচ্ছিল। ওই বাজারে তখনো বিজেপির বেশকয়েকটি পতাকা টানানো ছিল। বিজেপির পতাকা টানানোর বিষয়টি এই এলাকার বেশিরভাগ বাসিন্দার কাছে নতুন ঠেকেছে।

একই সময় ২৭ বছর বয়সী মিনারুল ইসলাম নামে এক যুবক বলেন, অতীতে কখনো তারা আমাদের ভোট চাইতে আসেনি।

মিনারুলের এই অবাক হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা প্রায়শই জোর দিয়ে বলতেন বিজেপির ‘মিয়াদের’ ভোটের দরকার নেই। এই ‘মিয়া’ শব্দ বাঙালি মুসলমানদের জন্য অপমানজনক। এছাড়া তাদের প্রায়শ অবৈধ অভিবাসী হিসেবে অপমানিত করা হতো।

আসামে ‍মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ৩৫ শতাংশ। বিজেপি ২০১৬ সালে বাঙালি-মুসলিম-বিরোধী মনোভাব নিয়ে ক্ষমতায় আসে। তৎকালীন বিধানসভা নির্বাচনকে তারা ‘সরাইঘাটের শেষ যুদ্ধ’ বলে আখ্যা দিয়েছিল। ৬৫ শতাংশের সঙ্গে ৩৫ শতাংশের এই লড়াইকে ২০২১ সালের নির্বাচনে ‘সভ্যতার যুদ্ধ’ বলে অভিহিত করেছিল দলটি। ১২৬ সদস্যের আসাম বিধানসভায় বিজেপির একজনও মুসলিম বিধায়ক নেই।

আর শর্মার সরকার কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা অনুসরণ করেছে। বারবার যার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে বাঙালি মুসলমান। তার সরকার উচ্ছেদ, মাদ্রাসা গুঁড়িয়ে দেওয়া, বাল্যবিবাহ বিরোধী অভিযান চালায়। আর এর মাধ্যমে হাজার হাজার মুসলিম পুরুষকে কারাগারে বন্দি করা হয়। এ ছাড়া রাজ্যে বহুবিবাহ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি। এমনকি তিনি বাঙালি মুসলিম সবজি চাষীদেরকে ‘সার জিহাদ’ বলেও অভিযুক্ত করেছেন।

কিন্তু এই লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি অন্তত তিনটি আসনে মুসলিম ভোট পেতে মরিয়া। আসন তিনটি হলো- মধ্য আসামের নওগাঁ, ব্রহ্মপুত্রের উত্তর তীরের দাররাং-উদালগুড়ি এবং দক্ষিণ আসামের বরাক উপত্যকার করিমগঞ্জ। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে নওগাঁ বাদে সবকটি আসনে বিজেপি জিতেছিল।

গত ১৮ এপ্রিল করিমগঞ্জ নির্বাচনী এলাকার নীলমবাজারে এক জনসভায় হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বাংলায় বিরল এক বক্তৃতা দেন। তিনি বলেন, আপনারা [মুসলিমরা] অরুণোদয় পাননি?

তিনি আসলে রাজ্য সরকারের একটি কর্মসূচির কথা বলছিলেন, যার মাধ্যমে সরকার নারীদের প্রতি মাসে ১২৫০ টাকা করে দিত। তিনি বলেন, প্রতি মাসে বিনামূলে ৫ কেজি চাল পান কি পান না? মুসলমানদের কি আয়ুষ্মান ভারত কার্ড আছে, না নেই?

আজকের ভোটের আগে ওই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় প্রচারণায় জোর দিয়েছিলেন শমা। প্রতিটি জনসভায় লোকসমাগমও হয়েছিল অনেক।

মজার বিষয় হলো, ভোট পেতে প্রায়ই হেয় করা মুসলিমদের মন জয়ে দলটি শুধু তাদের কল্যাণমুখী কর্মসূচির জোর প্রচারই চালাচ্ছে না। তারা পিছিয়ে পড়া বাঙালি মুসলিম গোষ্ঠীগুলির কাছেও যাচ্ছে এবং তপশিলি জাতির মর্যাদা ও উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সুবিধার প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন। যদিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মুসলিমদের তপশিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসরদের সংরক্ষণ সুবিধা দেওয়ায় কংগ্রেসকে একহাত নিয়েছেন।

তবে এটা ঠিক, রাজ্যের ১৪টি লোকসভা আসনে কোনো মুসলিমকে প্রার্থী করেনি দলটি। এই আসনগুলির মধ্যে অন্তত তিনটিতে মুসলমান ভোটারের সংখ্যা ৫০ শতাংশের বেশি। কিছু ক্ষেত্রে, বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে মুসলিম ভোট পাওয়ার জন্য সরাসরি ভয় দেখানোর অভিযোগও রয়েছে।

'তারা ভালো কাজ করেছে'

ওই তিন আসনের মধ্যে দুটিতে আজ (২৬ এপ্রিল) ভোট হয়। নওগাঁ এবং করিমগঞ্জে বাঙালি মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এই নির্বাচনী এলাকাগুলিতে দেখা গেছে, বিজেপির ভোটের আবেদন অনেকের মধ্যে আলোড়ন তৈরি করেছে। যদিও তা ভোটে রূপান্তরিত হবে কিনা বলা কঠিন।

করিমগঞ্জ-ভিত্তিক সমাজসেবা সংস্থা বরাক কাঁথার সদস্য জাকারিয়া তাপাদার বলেন, এই প্রথম মুসলিমদের একটি অংশ বিজেপির দিকে ঝুঁকে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে।

সুতার গাঁওয়ের ৪০ বছর বয়সী মনসুর আহমেদ পেশায় মুদি দোকানি। তার পূর্বপুরুষরা কংগ্রেস সমর্থক। তিনিও জাকারিয়ার সঙ্গে একমত। তিনি বলেন, কেউ কল্পনাও করেনি এখানকার লোকেরা বিজেপিকে ভোট দেওয়ার কথা ভাববে। কিন্তু বিজেপি সরকারের বাঁধ নির্মাণ শুরুর পর মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন এসেছে।

মনসুর আসলে ব্রহ্মপুত্রের পানি ঠেকাতে রাজ্যের পানিসম্পদ বিভাগের নির্মিত ৯৩০ মিটার দীর্ঘ বাঁধের কথা উল্লেখ করেছেন। এই বাঁধের ফলে মুয়ামারি, সুতার গাঁও এবং মইরাবাড়ি-ধিং এলাকার অন্যান্য গ্রামের ঘরবাড়ি এবং ক্ষেত পানির প্লাবন থেকে রক্ষা পায়।

সুতার গাঁওয়ের কাছে বিরিঙ্গাবাড়ি গ্রামের আতাউর রহমান বলেন, বিজেপি ভালো কাজ করেছে। নদী থেকে আমাদের রক্ষায় কংগ্রেস কখনও কিছু করেনি।

বিজেপি নওগাঁতে ভোটারদের প্রতি নিজেদের আন্তরিকতা বোঝাতে ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়েছে। বিজেপির কংগ্রেস এবং অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (এআইইউডিএফ) সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা। আসনটিতে বিজেপি প্রার্থী শুধু মসজিদ পরিদর্শনই করেননি, প্রচারের সময় নামাজ ও ইফতার পার্টিতেও অংশ নেন।

৪১ বছর বয়সী মোহাম্মদ ইয়াসিন নামের এক মাদ্রাসা শিক্ষক বলেন, নওগাঁর প্রায় সব প্রার্থীই মইরাবাড়ি জামে মসজিদ, মইরাবাড়ির বৃহত্তম মসজিদ পরিদর্শন করেছেন। আমি গত ১৫ বছর ধরে এআইইউডিএফ-কে ভোট দিয়ে আসছি। এবার যে দল সরকার গঠন করতে পারবে তাকেই ভোট দেব।

মনসুর আহমেদ নামে এক দোকানদার বলেন, বাঁধ নির্মাণের ফলে বিজেপির প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। কিন্তু দলটি নিয়ে তাদের সন্দেহও গভীর। যেমন রাব্বুলেল মতো চেন্নাইতে কাজ করা ২৪ বছর বয়সী আবদুর রহিম বলছেন, বিজেপি মুসলিম জনগনকে অনেক হয়রানি করেছে। তারা চর এলাকা থেকে লোকজনকে উচ্ছ্বেদ করেছে, বাড়িঘর ভেঙে দিয়েছে। কিন্তু এখন তারা আমাদের ভোট চাইতে আসছে। আমরা কখনই তাদের ভোট দেব না।

রহিম অবশ্য স্বীকার করেছেন এলাকার কিছু মুসলিম গোষ্ঠী দল বদল করছে। তিনি বলেন, যাদের কিছু সামাজিক প্রভাব আছে বা সরকারের উপর নির্ভরশীল—যেমন থানা এবং সার্কেল বা জেলা অফিসের ঠিকাদার বা দালালরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু অধিকাংশ মুসলমান অর্থের প্রলোভনে বা নতুন সরকারি স্কিমে প্রভাবিত হবে না।

তার চাচা বাহার উদ্দিন বলেন, আমরা বিজেপিকে ভোট দেব না। তারা আমাদের ধর্মকে আক্রমণ করে, মুসলিম নারীদের শিশু উৎপাদনের কারখানা বলে এবং মসজিদ ও মাদ্রাসা ধ্বংস করে।

বিজেপির ইউ-টার্নের নেপথ্য

বহু দশক ধরে আসামের মুসলমানরা হয় কংগ্রেস বা বদরুদ্দিন আজমলের নেতৃত্বাধীন এআইইউডিএফ-কে ভোট দিয়েছে।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ঠেকাতে কংগ্রেস ও এআইইউডিএফ’র সমঝোতা হয়। ফলে কংগ্রেস তিনটি লোকসভা আসন জিতেছে, যার সবকটিতেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটার মুসলিম ছিল। কারণ সেখানে এআইইউডিএফ প্রার্থী দেয়নি। এর মধ্যে রয়েছে কালিয়াবোর ও নওগাঁ। যেখানকার বর্তমান সাংসদ যথাক্রমে কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ এবং প্রদ্যোত বোর্দোলোই।

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস এবং এআইইউডিএফ জোট করে ৪৫টি আসন পায়। যার মধ্যে ৩১টিতে মুসলিম বিধায়ক জিতেছিলেন।

এই বছর দল দুটি আলাদা আলাদভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এতে মুসলিম ভোট ভাগ হয়ে যাবে। আর এটাই বিজেপির জন্য সুবিধা। কথা হলো তারপরও দলটি কেন মুসলিম ভোটারদের আকৃষ্ট করতে চেষ্টা করছে? উত্তর: আসনের সীমানা নির্ধারণজনিত অসুবিধা।

গত বছর সীমানা জনিত কারণে বিধানসভা আসনের সংখ্যা কমেছে, যেখানে মুসলিম প্রার্থীদের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। লোকসভায় মুসলিম প্রার্থীদের আসন দুই থেকে তিনে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন-করিমগঞ্জ ও নওগাঁয় প্রায় ৬০ শতাংশ বাঙালি মুসলিম ভোটার রয়েছে। বিজেপির মিত্র এজিপি তৃতীয় মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ ধুবরি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণের পর নওগাঁ আসনে ১৯৯৯ সাল থেকে পরপর চার বার বিজেপির সাংসদ হওয়া রাজেন গোহাইন বলেন, নতুন করে সীমানা নির্ধারণের ফলে লোকসভা আসনটি ভবিষ্যতে বিজেপি প্রার্থীর জন্য অজেয় হয়ে উঠেছে।

বর্তমান সাংসদ প্রদ্যোত বোর্দোলোইয়ের প্রচারণায় এক কংগ্রেস নেতা বলেন, বিজেপি জানে যে তারা শুধু হিন্দু ভোট দিয়ে নওগাঁয় জিততে পারবে না। তাই সংখ্যালঘুদের ভোট পেতে বড় ধরনের ইউ-টার্ন নিয়েছে। তিনি এও স্বীকার করেছেন, বিজেপির সংখ্যালঘু এলাকায় ঢোকা তাদের সম্ভাবনাকে ক্ষতি করছে।

এআইইউডিএফ প্রার্থীর ভোট ভাগ হওয়া নিয়ে দলটিও চিন্তিত। ২০১৯ সালে বোর্দোলোই মাত্র ১৬৭৫২ ভোটের ব্যবধানে বিজেপি প্রার্থী রূপক সরমাহকে পরাজিত করেছিলেন।

জাতিভেদের রাজনীতি

নির্বাচনে জিততে বিজেপি পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তপশিলি জাতি মর্যাদা এবং কোটা সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।  এইরমক পিছিয়ে পড়া মুসলিম হলো বরাক উপত্যকার তিনটি জেলা এবং পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশের সিলেট জেলায় বসবাস করা মাইমল বা মাহিমালস—যারা মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে।

বরাক উপত্যকার নতুন একটি মহিমাল সমন্বয় কমিটির প্রধান মহম্মদ ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, কংগ্রেস গত ৭৫ বছর ধরে আমাদের সম্প্রদায়কে ভোটব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করেছে। কিন্তু তারা আমাদের জন্য কিছু করেনি।

তিনি দাবি করেন, গত ফেব্রুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা তাদের আশ্বাস দিয়েছেন তাদের তোলা চার দাবির বিষয়টি তিনি দেখবেন। দাবিগুলো হলো- তাদের আদিবাসী ও তপশিলি জাতির মর্যাদা দেওয়া, আসামের মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলিতে মহিমাল শিক্ষার্থীদের জন্য ২শতাংশ কোটা সংরক্ষণ এবং সংখ্যা নির্ধারণে একটি তাদের একটি আদমশুমারি।

তিনি জানান, ১৮ এপ্রিল হিমন্ত বিশ্ব শর্মার কথা শোনার জন্য নীলমবাজারের জনসভায় মহিমাল মুসলিমরা যায়। তাদের বেশির ভাগ মানুষ বিজেপিকে ভোট দেবে। শুধু তাই নয়, তার দাবি সুবিধা পাওয়ার আশায় প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার মহিমাল ভোটার এখন বিজেপির সমর্থক।

এ ছাড়া গত মার্চে বিজেপি কিরণ শেখদের (কৃষক) জন্য একটি উন্নয়ন কর্মসূচিও ঘোষণা করে। একসময় এই কৃষকরা জমিদারদের জমি চাষ করতো। এই বর্গাচাষীদের অভিযোগ, হিন্দু বাঙালিদের মধ্যে নমশূদ্রের মতোই মুসলমানদের মধ্যে তাদেরকে নিচু বর্ণের হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তারা বলেন, বহু বছর ধরে তারা কংগ্রেসের কাছে উপেক্ষিত। বিজেপি তাদের একটি উন্নয়ন কর্মসূচি দিয়েছে এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের মতো কোটা সুবিধাও দেবে।

করিমগঞ্জ জেলায় কৃষকদের প্রায় ৫০ হাজার ভোটার আছে। করিমগঞ্জ আসনে মহিমাল ফ্যাক্টর ছাড়াও, বিজেপি-বিরোধী ভোটারদের মধ্যেও ভাঙন তৈরির মাধ্যমে ভোট আদায়ের চেষ্টা করছে বিজেপি। করিমগঞ্জ এআইইউডিএফ-এর শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মুসলিম বাসিন্দারা কংগ্রেস প্রার্থী হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরীর পক্ষে একজোট হয়েছেন।

জমির প্রতিশ্রুতি

ফেব্রুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রী শর্মা ঘোষণা দিয়েছিলেন, আসামের চর বা নদীতীরবর্তী এলাকায় ভূমি জরিপ হবে। তিনি নির্দিষ্ট মুসলিম এলাকায় অভিজাত, জমিদার গোষ্ঠী ও মাতবর শ্রেণির কাছ থেকে জমি মুক্ত করে ভূমিহীনদের দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি তার প্রতিশ্রুতি আরও দ্বিগুণ করেন। ২৪ এপ্রিল দারাং জেলায় এক নির্বাচনী সভায় তিনি বলেন, চরে অনেক গরীব লোক আছে যাদের জমির কাগজপত্র নেই। এজন্য তারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এবার বিজেপি সরকার চরে স্থায়ী সমীক্ষা করবে এবংদরিদ্র মানুষকে ন্যায়বিচার উপহার দেবে।

দারাংয়ের বাসিন্দা ও অধিকার কর্মী সাদ্দাম হুসেন বলেন, ধলপুর, খারুপেটিয়া এবং দলগাঁওয়ের চরের অনেক মুসলমান বিশ্বাস করেন তারা যদি বিজেপিকে ভোট দেয় তবে জমির মালিক হবেন। এই খেলা আগে কংগ্রেস খেলেছে, এখন বিজেপি খেলছে।

ভয়ভীতি, নিরাপত্তাহীনতা

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সময়ও বাঙালি মুসলমানদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।

করিমগঞ্জে বিজেপি বিধায়ক বিজয় মালাকার মুসলিম ভোটারদের একটি অংশকে ভোট না দিলে বুলডোজারে গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ। যদিও মালাকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ ছাড়া ১৮ এপ্রিল মরিগাঁওয়ের এক নির্বাচনী সমাবেশে সেখানকার বর্তমান বিজেপি বিধায়ক রমা কান্ত দেওরিও ভোট না দিলে সংখ্যালঘু ভোটারদের ক্ষতির হুমকি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।

দারাংয়ের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা স্ক্রল ডট ইনকে বলেছেন, নিজেদের রক্ষায় তাদের হয়তো বিজেপিকে ভোট দিতে হতে পারে। অধিকারকর্মী সাদ্দাম বলেন, মুসলিমরা উচ্ছ্বেদ এবং হয়রানি থেকে রক্ষায় নিজেরাই বিজেপির দিকে ঝুঁকছে।

অভিযোগ রয়েছে, ২০১৬ সাল থেকে বিজেপি রাজ্য সরকার সরকারি জমি দখলের অভিযোগে ১০ হাজারের বেশি পরিবারকে উচ্ছেদ করেছে, যার বেশিরভাগই বাঙালি মুসলিম। করিমগঞ্জেও একই ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

সূত্র: স্ক্রল.ইন

অনুসরণ করুন