Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

দশ বছর পর কী ভাবছে ‘মোদি-প্রজন্ম’

Icon

প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১৬ পিএম

দশ বছর পর কী ভাবছে ‘মোদি-প্রজন্ম’

নিজের মুদি দোকানে দুলাল কলিতা। ছবি: স্ক্রল.ইন

২০১৪ সালে প্রথমবার ভোট দেওয়া ভারতী তরুণরা গত এক দশক নিয়ে কী ভাবছেন? সংবাদমাধ্যম স্ক্রল ডট ইনের প্রতিবেদকরা সেই ভাবনার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন। সংবাদমাধ্যমটি সেই ভোটারদের নাম দিয়েছেন ‘মোদি-প্রজন্ম’।

২৯ বছর বয়সী দুলাল কলিতা আসামের শিবসাগর জেলার আমগুরি শহরের বাসিন্দা। তিনি আশা করেছিলেন ২০১৪ সালে তার প্রথম ভোট তার জীবন এবং চারপাশের সমাজে অর্থপূর্ণ পরিবর্তন আনবে।

আমগুড়িতে তিনি একটি ছোট মুদি দোকান চালান। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে আশার ঝলক দেখা গিয়েছিল। ভারতের চলতি লোকসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপে তিনি ১৯ এপ্রিল আসামের জোড়হাট লোকসভা আসনে ভোট দিয়েছেন। একই রাজ্যের অন্যান্য অংশে পরবর্তীতে ধারাবাহিকভাবে ২৬ এপ্রিল ও ৭ মে ভোটগ্রহণ হবে। 

দুলাল বলেন, ২০১৪ সালের আগে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। আমরা আশা করেছিলাম মোদি সরকারকে নির্বাচিত করার মধ্য দিয়ে কংগ্রেস সরকারের দুর্নীতি ও দুঃশাসন থেকে মুক্তি পাব।

তিনি এও আশা করেছিলেন, ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন জোটকে দেওয়া ভোটই আসামে অবৈধ অভিবাসন নিয়ে সমস্যার মোকাবিলা নিশ্চিত করবে।

২০১৪ সালের নির্বাচনী প্রচারে দেওয়া বক্তব্যে মোদির প্রতিশ্রুতি উল্লেখ করে দুলাল বলেন, মোদি বলেছিলেন ১৬ মে’র পর বাংলাদেশীরা চলে যাবে। বিদেশীদের তল্পিতল্পা গুছিয়ে আমাদের ভূমি ছেড়ে যেতে হবে।

দুলাল উল্লেখ করেন, তার সেই আশা দুরাশায় পরিণত হয়েছে। যখন অবৈধ অভিবাসীদের সমস্যার কথা আসে, তখন সরকার ‘সিএএ’র মাধ্যমে তাদের স্বাগত জানাতে লাল গালিচা বিছিয়েছিল। 

প্রসঙ্গত, সিএএ হলো ভারতের বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন। আইনটিতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে যাওয়া মুসলমানদেরকে বাদ দিয়ে ছয়টি ধর্মের অনুসারীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এমনকি তারা প্রয়োজনীয় নথিপত্র ছাড়াই ভারতে প্রবেশ করলেও দ্রুত তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়। আইনটি প্রকৃতগতভাবেই মুসলিমদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক ছিল যুক্তি তুলে ভারতজুড়ে এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়। আসামেও এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়নের মতো অসমিয়া জাতীয়তাবাদী দলগুলি একটি স্বতন্ত্র আপত্তি তুলেছিল যে—আইনটি বড় পরিসরে বাংলাদেশ থেকে হিন্দুসহ অভিবাসীদের আসামে অনুপ্রবেশের সুযোগ দেবে। যা কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই আসামের জনসংখ্যা ও সংস্কৃতি পরিবর্তন করে দেবে। 

১৯৮০-এর দশকে নথিভুক্ত হননি এমন অভিবাসীদের বিরুদ্ধে একটি আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন। পরে ১৯৮৫ সালে যা আসাম চুক্তিতে পরিণত হয়েছিল। এই চুক্তির অধীনে বলা হয়েছিল, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পর কোনো ব্যক্তির রাজ্যে প্রবেশকে বেআইনি ধরে নেওয়া হবে। যদিও সংশোধিত আইনের অধীনে যারা ওই তারিখের পরও রাজ্যে প্রবেশ করেছে তাদের নাগরিকত্বও দেওয়া যেতে পারে বলা হয়েছে। আইনের এই অংশটির বিরুদ্ধেই ছাত্র ইউনিয়ন প্রতিবাদ করেছিল।

আইনটির মাধ্যমে এই অঞ্চলে হিন্দু ভোট-ব্যাংককে শক্তিশালী করতে আসামের বিজেপি নেতাদের অনেকেই অসমিয়া জাতীয়তাবাদের মূল নীতিগুলি বাদ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০১৯ সালের শীতে আসামে আইনটির বিরুদ্ধে হওয়া বিক্ষোভ সহিংস হয়ে ওঠে। এতে পাঁচজনের মৃত্যু হয় এবং পুরো রাজ্য স্থবির হয়ে পড়ে।

দুলাল আসামের প্রধান শহরেরই বাসিন্দা। সেখানেই সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল ছিল। আইনটি পাস করাকে রাজ্যের জন্য ঐতিহাসিক ঘটনা বলে উল্লেখ করেন তিনি। দুলাল বলেন, এটি অসমিয়া জাতিকে ধ্বংস করবে। এটি আসামের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল।

জোড়হাটের বর্তমান সংসদ সদস্য বিজেপির তপন গগৈ। তিনি অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়নের প্রাক্তন ছাত্র নেতা। ২০১৫ সালে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন এবং অসমিয়া জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা হিসাবে মর্যাদাও পেয়েছিলেন। দুলাল এই বিজেপি নেতার তীব্র সমালোচনা করেন। 

দুলাল বলেন, যখন তিনি ছাত্রনেতা ছিলেন তখন আমাদের সম্প্রদায়কে রক্ষার কথা বলেছিলেন। কিন্তু বিজেপি থেকে সাংসদ হওয়ার পর তিনি তার অসমিয়া জাতীয়তাবাদী আদর্শকে হিন্দুত্বের কাছে সমর্পণ করেন। 

এ ছাড়া আসামের নদীগুলোতে বড় বাঁধ প্রশ্নে বিজেপি বাঁক বদল করেছে বলেও অভিযোগ করেছেন দুলাল। ২০০০ সালের মাঝামাঝি থেকে আসামে এই জাতীয় প্রকল্পগুলির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছিল। আন্দোলনকারীরা যুক্তি দিয়েছিল, এটি বাস্তুসংস্থানগত ব্যাপক ক্ষতির কারণ হবে এবং বাঁধের নিচের দিকের বাসিন্দাদের জীবন ধ্বংস করে দেবে। তিনি উল্লেখ করেন ২০১০ সালে গেরুকামুখে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে বিজেপি নেতা রাজনাথ সিং অংশ নিয়ে নদীর উপর বড় বাঁধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে বিজেপি বেশ কয়েকটি বড় বাঁধ দিয়েছে। যেমন আসাম ও অরুণাচল প্রদেশের সীমান্তে সুবানসিরি বাঁধ এবং অরুণাচল প্রদেশের লোয়ার দিবাং উপত্যকা জেলায় দিবাং বাঁধ। আন্দোলনকারীদের আশঙ্কা, এসব বাঁধের কারণে নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া ডিব্রুগড় জেলার ডিব্রু-সাইখোয়া জাতীয় উদ্যানেরও ক্ষতি হবে। 

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালের নির্বাচনী প্রচারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ক্ষমতায় যাওয়ার ১০০ দিনের মধ্যে মোরান, মুটক, কোচ রাজবংশী, তাই আহোম, সুতিয়া এবং চা বাগানে কাজ করা উপজাতিকে তপশিলি উপজাতির মর্যাদা দেবেন। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। বিজেপির একজন সাংসদও কখনো এই দাবি নিয়ে সংসদে কথা বলার বা উত্থাপন করার সাহস করেননি। তারা প্রতিটি প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে ভোল পাল্টে অন্য পথে হেঁটেছেন। 

দুলাল জানান, শিক্ষার কথা আসলে দেখা যায় বিজেপি স্কুল শিক্ষায় বেসরকারিকরণের দিকে ঝুঁকেছে। গত সাত বছরে আসামের ৮০৬৬ টিরও বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে বিজেপি সরকার।

তিনি বলেন, একীভূতকরণের নামে স্কুলগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নরেন্দ্র মোদি বা বিজেপি সরকারের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো তারা শুধু বিমানবন্দর থেকে জিনিসপত্র শিল্পকারখানায় নিয়ে বিক্রি করছে এবং স্কুল বন্ধ করে দিচ্ছে।

বিজেপির অধীনে রাজ্যের শাসন ব্যবস্থার সমালোচনা ছাড়াও, রাজনীতিতে বিজেপির ধর্মের ব্যবহারের বিস্তৃত সমস্যার কথা বলেন দুলাল। তিনি বলেন, রাজনীতি ভিন্ন জিনিস। একটি রাষ্ট্র বা দেশ পরিচালনা করাও ভিন্ন জিনিস। আবার পূজা বা প্রার্থনাও ভিন্ন জিনিস, যা খুবই ব্যক্তিগত ব্যাপার।

অনুসরণ করুন