Logo
Logo
×

সবিশেষ

অনলাইনে ট্রেনের শতভাগ টিকিট ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল’

Icon

প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:১৯ পিএম

অনলাইনে ট্রেনের শতভাগ টিকিট ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল’

ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে অগ্রিম টিকিট বিক্রি চলছে ট্রেনে। এ বছর শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হলেও এ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলছেন সাধারণ যাত্রীরা। দেশের ৭০ ভাগ মানুষ অনলাইনের বাইরে থাকার পরও কোন যুক্তিতে শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি করা হচ্ছে এ নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

ঈদে যানজট এড়িয়ে মানুষের বাড়ি ফেরার অন্যতম প্রধান বাহন ট্রেন। এবারের ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে গত ২৪ মার্চ থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়ে ৩০ মার্চ পর্ন্ত চলে। এ দিনগুলোর মধ্যে অনলাইনে ৩ এপ্রিল থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ট্রেনের টিকিট দেওয়া হয়।

তবে প্রতিদিন টিকিটের জন্য যাত্রীরা কোটি কোটিবার সার্ভারে ঢুকে চেষ্টা করেও কাঙ্ক্ষিত টিকিট পাননি।

টিকিট বিক্রির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সহজ ডটকম সূত্র জানায়, অগ্রিম টিকিট বিক্রির সর্বশেষ দিন ৩০ মার্চ ৯ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সকাল ৮টায় অনলাইনে ট্রেনের পশ্চিমাঞ্চলের টিকিট বিক্রি শুরুর পর হাহাকার ছিল এ অঞ্চলের বিভিন্ন স্টেশনগামী টিকিটের। পশ্চিমাঞ্চলের টিকিট বিক্রি শুরুর পর বিভিন্ন স্টেশনের টিকিট নিতে মাত্র আধা ঘণ্টায় ১ কোটি ২৮ লাখবার অনলাইনে ক্লিক করে আগ্রহী যাত্রীরা। আর ৮টা ৪৫ মিনিটে টিকিটের জন্য সার্ভারে হিট করেছে ২ কোটি বার। এক ঘণ্টার মাথায় সকাল ৯টায় ট্রেনের টিকিটের জন্য যাত্রীরা অনলাইনে ক্লিক করে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ বার।

টিকিটের জন্য যাত্রী চাহিদা অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এত যাত্রী চাহিদা থাকলেও ট্রেনের টিকিট ছিল খুবই অপ্রতুল। সহজের তথ্যমতে, বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রায় ১৬ হাজার ২২ এবং পশ্চিমাঞ্চলের ১৪ হাজার ৬০১টি টিকিট প্রতিদিন বিক্রি করা হচ্ছে অনলাইনে।

বরাবরের মতো এবারের ঈদেও ট্রেনের টিকেটের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে রংপুর, দিনাজপুর, চিলাহাটি, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও রুট। এ বছর পশ্চিমাঞ্চলের জন্য মোট ১৪ হাজার ৬০১টি টিকিট ছাড়ার পর আধা ঘণ্টায় ১২ হাজার ৭৮৩টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। আর এ টিকিট খুঁজতে আগ্রহী যাত্রীরা সার্ভারে ক্লিক করেছে ১ কোটি ২৮ লাখ বার। দুপুর ২টায় পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন স্টেশনের টিকিট বিক্রি শুরু হয়। এ অঞ্চলের বিভিন্ন স্টেশনের টিকিটের জন্য দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত গ্রাহক অনলাইনে হিট করেছে ৯৬ লাখ ৮০ হাজার বার। আর আধা ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলের টিকিট বিক্রি হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার। দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত পূর্বাঞ্চল, পশ্চিমাঞ্চল মিলে মোট টিকিট বিক্রি হয়েছে ২৫ হাজার ১১টি। বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত পূর্বাঞ্চল, পশ্চিমাঞ্চল মিলে মোট ৩২ হাজার ৫৮৬ টিকিটের মধ্যে বিক্রি হয়েছে ৩০ হাজার ১৬৫টি।

এদিকে, অনলাইনে শতভাগ ট্রেনের টিকিট বিক্রি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশে মোবাইল ফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন নামের একটি সংগঠন। তারা বলছে, দেশের ৭০ ভাগ নাগরিক অনলাইন ব্যবহার থেকে বাইরে থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ রেলওয়ে ঈদ যাত্রায় ঘরমুখো মানুষের জন্য শতভাগ টিকিট অনলাইনে রেখেছে। অনলাইনের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদের জন্য স্বশরীরে কাউন্টারে টিকিট কাটার ব্যবস্থা রাখার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

এ বিষয়ে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে বর্তমানে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটি ৬৩ লাখ এবং ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারী এক কোটি ২২ লাখ ৮০ হাজার। অন্যদিকে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশে ৭.৪ শতাংশ নাগরিক কম্পিউটার ব্যবহার করে, ল্যাপটপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২ দশমিক ৯ শতাংশ, আর সর্বশেষ ফোন ব্যবহারকারী ৮-৯.৯%; কিন্তু এর মধ্যে ৬৫% ফিচার ফোন ব্যবহারকারী হওয়ায় তারা অনলাইনে টিকিট কাটতে পারবেন না।

বিবিএসের তথ্যমতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ২৪.৯ শতাংশ। অর্থাৎ, যদি আমরা ৩০ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হিসাব করি তাহলেও ৭০ শতাংশ নাগরিক অনলাইন সেবার বাইরে থাকছে। রেল মন্ত্রণালয় যদিও কালোবাজারি থেকে মুক্ত এবং নাগরিকদের হয়রানি থেকে বাঁচতে শতভাগ অনলাইনের ব্যবস্থা করেছে।

যে দেশে এখনো শতভাগ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করা থেকে দূরে রয়েছে সেখানে শতভাগ অনলাইনে টিকিট বিক্রি করা হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই না। এটি এক ধরনের নাগরিক বৈষম্য সৃষ্টি করছে যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।

তিনি আরো বলেন, শতভাগ মানুষের হাতে ডিভাইস এবং ইন্টারনেট না থাকার সুযোগ নিচ্ছে পাড়া মহল্লায় ফোন-ফ্যাক্সের দোকানদাররা। তারা প্রতিটি টিকিট কেটে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা অতিরিক্ত আদায় করছে ঘরমুখো মানুষদের কাছ থেকে। তার মানে এখানেও একটি মধ্যস্বত্বভোগি গোষ্ঠী মুনাফা লুটছে।

তিনি অনলাইন টিকিট বিক্রির পাশাপাশি নাগরিকদের জন্য পর্যাপ্ত কাউন্টারের ব্যবস্থা করে স্বশরীরে টিকিটের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

অনুসরণ করুন