Logo
Logo
×

সবিশেষ

ঈদ বাজার: হাতের নাগালে থাকলেও পকেটের নাগালে নেই

Icon

প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫৩ পিএম

ঈদ বাজার: হাতের নাগালে থাকলেও পকেটের নাগালে নেই

ফাইল ছবি

ক্রমাগত বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতির মধ্যে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোই দায় হয়ে পড়েছে। প্রতিদিনের বাজার আর সাংসারিক ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। চলমান এই অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে আসন্ন ঈদুল ফিতরের বাজার করা তাদের জন্য চাইলেও বিলাসিতা মনে হচ্ছে। বাজার ঘুরেই এমন চিত্র দেখা গেছে, যেখানে অন্যান্য ঈদের তুলনায় বেচা-বিক্রি অনেকটা কম।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানুষ নির্দিষ্ট টাকা নিয়ে আসলেও আদতে সেই বাজেটের মধ্যে কিছুই হচ্ছে না। যে কারণে অল্পতেই কেনাকাটা শেষ করতে হচ্ছে তাদের।

অথচ, পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ক্রেতারা। ক্রেতাদের পছন্দের সব ধরনের কাপড় ও প্রয়োজনীয় পণ্য রাখলেও তা বিক্রি হচ্ছে না। অনেকেই ঘুরে ঘুরে দেখে আর দাম জিজ্ঞেস করে ফিরে যাচ্ছেন।

টিকাটুলীর রাজধানী মার্কেটে সবুজ ছায়া নামে কাপড়ের একটি দোকানের মালিক আবিদুর ইসলাম। ক্রেতা না ডেকে তিনি শুধু মোবাইলে কথা বলছেন। দোকানটিতে বিক্রি হয় মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের পোশাক এবং ছেলেদের শার্ট-প্যান্টে। পাশ দিয়েই দেখা গেল, ক্রেতারা বিভিন্ন ধরনের কাপড় দেখে দেখে চলে গেল। দামও জিজ্ঞাসা করলো না। আবার কেউ কেউ দাম জিজ্ঞাসা করেই চলে যাচ্ছেন।

আবিদুর বাংলা আউটলুককে বলেন, মানুষের হাতে টাকা নেই। সবাই ঈদের বাজারে জিনিসপত্র দেখতে আসে। আর পোশাকের দাম বেড়ে গেছে। এতো কম টাকায় পোশাক চায়, তাই আমার দোকানের বেচা-কেনার ইন্টারেস্ট শেষ হয়ে গেছে।

ফেসবুকে আমার দোকানের বিজ্ঞাপন দেওয়া আছে, ধনীরা সেখানে অর্ডার দেয়। এজন্য মোবাইলে বেশি কথা বলি।

তিনি বলেন, আশায় আছি ঈদের আর ১০ দিন বাকি। এর মধ্যে বেচা-কেনা করে খরচের টাকা উঠাতে হবে।

পাশেই নারীদের কাপড় ও শাড়ির দোকান জনতা ফেবিক্স। দোকানটির মালিক আমির হোসেন বলেন, সীমিত আয়ের মানুষজনদের কেনাকাটা করাটা কঠিন হয়ে গেছে। চাকরিজীবীরা অনেকে এখন বোনাসের টাকা পাননি। বোনাসের টাকা পেলে আসল ভিড় দেখা যাবে। তবে ক্রেতারা পোশাকের দাম আপত্তি তুলছে। তারা বলছে দেশের টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ির এতো দাম চায় কেন? তারা কিভাবে সেই শাড়ি কিনবে বলেন। আগে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় পাওয়া যেত, এখন সেই শাড়ির দাম ৯০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা। একটা টাঙ্গাইলের মাসলাইস কটন শাড়ির দাম এখন হাঁকছে ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা।

গুলিস্তান, নিউমাকের্ট ও ফার্মগেটের ফুটপাতের বিক্রেতাদের বিক্রি ভালো হচ্ছে। নিম্ন ও মধ্য আয়ের ক্রেতারা বড় শপিংমল বা বিপণি-বিতানে যেতে চান না, কারণ সেখানে জিনিসপত্রের দাম বেশি।  তারা গুলিস্তানের ফুটপাতে বিক্রি হওয়া পোশাক ও জুতার দোকানে ভিড় জড়িয়েছেন।

একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন নূরুল হক। গুলিস্তানে দেখা তার সঙ্গে। ফুটপাত থেকে জুতা কিনছিলেন। তিনি বলেন, আমরা জানি গুলিস্তানের ফুটপাতের বাচ্চার জুতা কোনোভাবেই ভালো হবে না। ঈদের পর দিনই ছিড়ে যাবে। অনেকটা ঈদের জন্য বাচ্চাদের নতুন কিছু কিনে দিচ্ছি, এই আমার স্বান্তনা।

তিনি আরো বলেন, আমরা যারা সীমিত আয়ের মানুষ তাদের জন্য এবার কেনাকাটা করাটা কঠিন হয়ে গেছে। তবে বোনাস পেলে আবার ঈদের বাজার করব।

বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে বেসরকারি চাকরিজীবী আহমেদুল হক বাংলা আউটলুককে বলেন, শাশুড়ি আর মায়ের জন্য জন্য শাড়ি ও বাবার জন্য প্যান্ট কিনেছি। এখন আমরা আর বাবার জন্য পাঞ্জাবি কেনার কথা ভাবছি। তবে দাম গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ বেড়ে গেছে।

ধানমন্ডির এআর প্লাজায় কাপড় ও জুতার দোকান ‘ম্যারুন্ড’র ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম অপু বলেন, এখন স্বল্প পরিসরে বিক্রি হচ্ছে। মানুষের হাতে টাকা আসেনি। আশা করছি, ঈদের এক সপ্তাহ আগে পুরোদমে বিক্রি শুরু হবে।

রাপা প্লাজা নীল আচল শাড়ীজ মালিক মনসুর আলী বলেন, গত দশ দিনে আমার দোকানে হাতেগোনা কাস্টমার পেয়েছি। এখানে আর্মি আর নেভিতে চাকরি করা মানুষজন আসে। তাদের হাতেও কি টাকা নাই?

অনুসরণ করুন