Logo
Logo
×

অভিমত

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হলে লাভ কাদের?

Icon

আহমেদ খিজির

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১০ পিএম

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হলে লাভ কাদের?

ফরিদপুরে এক নির্মম ঘটনার মধ্যে দিয়ে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সম্ভাবনা তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জেলার মধুখালী পঞ্চপল্লী এলাকার একটি মন্দিরে আগুন লাগার কথা ছড়িয়ে পড়ে। মন্দিরের  পাশেই পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টয়লেট নির্মাণের কাজ করছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। আগুনের ঘটনায় তাঁদের সন্দেহ করে উত্তেজিত জনতা তাঁদের উপর হামলা চালালে মারা যান আশরাফুল ও আরশাদুল নামের দুই ভাই। 

এই উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বারেবারে ফিরে এসেছে। প্রতিবারই প্রমাণ হয়েছে এর পিছনে রয়েছে স্থানীয় কিংবা জাতীয় রাজনীতির স্বার্থ। এমনকি আন্তর্জাতিক ইশারাও এর পিছনে থাকে। ভারতের নির্বাচনের ঠিক আগেরদিন এইরকম একটি ঘটনা একেবারে কাকতালীয় নাও হতে পারে। 
নানারকম দেশী বিদেশি চাপ উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ আবারো একটি অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। প্রবল শক্তিশালী প্রতিবেশী ভারতের ক্ষমতাসীনদের সমর্থনেই যে আওয়ামী লীগ এই কাজটি করতে পেরেছে তা স্পষ্ট। এখন সময় ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারকে এর প্রতিদান দেয়া। 

বাংলাদেশে যদি একটা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে দেয়া যায়, যদি প্রমাণ করা যায় ‘হিন্দু খাতরে মে হ্যায়’ তবে তা ভারতীয় ভোটারদের আরো বেশী করে হিন্দুত্ববাদী করে তুলবে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ, যারা নিজেদের দাবি করে এ দেশের হিন্দুদের রক্ষাকর্তা হিসেবে, তাঁরা সেই পুরান টেপ রেকর্ডার বাজিয়ে বলবে আমাদের বিকল্প নাই। 

এই কাজটা আওয়ামী লীগ বারবারই করে। তথাপি রাজনীতির মারপ্যাঁচে দলটা হিন্দুদের গুটি হিসেবে ব্যবহার করে ভারতকে খুশী রাখে আবার বাংলাদেশি হিন্দুদের বিপদে ফেলে দেয়। অবশ্য, এই বিপদে পড়ে গরীব, অসহায় হিন্দুরা। ধনী, ক্ষমতাসীনদের কিছু হয় না, বরং তাঁরা নিজেদের ধর্মের অসহায় লোকদের বিপদে ফেলে ফায়দা লোটে। অনেকটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বা এর আগে পড়ে ধনী ইহুদীদের মতো। 

কিছু কিছু ইসলামী দল এবং এমনকি জাতীয়তাবাদী দলের সমর্থকেরাও ফরিদপুরের ঘটনাটাকে হিন্দুদের হাতে মুসলিমদের খুন বলে উত্তেজিত করার চেষ্টা করবে। হিন্দু নেতারাও বিজেপির লাভ হবে এই জজবায় উসকে দেবে। এমনিতেই অর্থনৈতিক চাপে থাকা, অপশাসনে পিষ্ট, ভারতের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে ক্ষুব্ধ বাংলাদেশিদের যদি ভারত বিদ্বেষকে হিন্দু বিদ্বেষে রুপান্তর করা যায় তবে বিজেপি ও আওয়ামী লীগের রমরমা। 

মানুষের ভাত-কাপড় আর ভোটের অধিকার বাদ দিয়ে যদি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধিয়ে দেয়া যায় দেশ দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাবে। জঙ্গি জুজুর ভয় দেখিয়ে আর চেতনা বনাম ধর্মীয় অনুভূতির লড়াই তৈরি করে আওয়ামী লীগ পনের বছর ধরে শাসন চালাচ্ছে। আবারো সেই গুটি চেলেই তাঁরা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইবে। এই ব্যাপারে তাঁদের ট্র্যাক রেকর্ড অসামান্য। 

এই ফাঁদে পড়া যাবে না। এই লেখাটা লেখার সময় মনে হইলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতির নাম গনেশ চন্দ্র রায় সাহস। মনে পড়লো, গত বছর গোলাপবাগে বিএনপির মহাসমাবেশে কর্মীদের সামনে দীর্ঘ ভাষণ দিয়ে উদ্দীপ্ত করা নিপুন রায়ের কথা।

বাংলাদেশ মুসলমানের, বাংলাদেশ হিন্দুর। বাংলাদেশ বাঙালির, চাকমা, সাঁওতাল সবার। ভারতের হিন্দুত্ববাদের ভাইরাস রুখতে আমাদের সবাইকে একত্রিত হতে হবে। নাহলে নেপোয় দই মারবে।

অনুসরণ করুন