Logo
Logo
×

অভিমত

ব্যাংক একীভূতকরণ : লুটেপুটে নেবার নতুন ফন্দি 

Icon

আহমেদ খিজির 

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০০ এএম

ব্যাংক একীভূতকরণ : লুটেপুটে নেবার নতুন ফন্দি 

আইনস্টাইন বলেছিলেন মহাবিশ্বের সীমা থাকলেও থাকতে পারে, মানুষের স্টুপিডিটির নাই। তবে, আওয়ামী আমল দেখলে উনি কথা ঘুরায়ে বলতেন, মানুষের স্টুপিডিটিরও সীমা থাকতে পারে কিন্তু আওয়ামী লুটপাটের সীমা নাই। 
সেই অসীম লুটপাটের আরেক নতুন মাত্রা যোগ হতে চলেছে ইতিমধ্যেই লুটপাটে ধসে যাওয়ার ব্যাংকিং খাতে। 

নীতিনির্ধারকদের হুকুমমতো বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক পাঁচটি আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যাংককে পাঁচটি তুলনামূলক ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণের পরিকল্পনা নিয়েছে।

ব্যাংকের একীভূতকরণ কোনো নতুন ব্যাপার না। কিন্তু, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাপারটা সন্দেহজনক এবং বিশেষত যখন বিশ্বব্যাপী সুদের হার উর্ধমুখী। এই সময়ে দুর্বল ব্যাঙ্কগুলোও হয়তো ব্যবসা করে চাঙ্গা হতে পারতো। এর বদলে স্বল্পসংখ্যাক ব্যাংকে আমানত পুঞ্জিভূত হলে, এর ক্ষমতাসীন পরিচালকরা সেগুলো নয়ছয় করার সুযোগ পাবেন। 

মনে রাখতে হবে এই ব্যাংকগুলো দুর্বল হবার মূল কারণই হচ্ছে ক্ষমতার প্রভাবে বিপুল অংকের ঋণ খেলাপ। ক্ষমতাসীনরা আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে ব্যাংকগুলো থেকে অবাধে লুটে নেয়ায় সেগুলো ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। 

এই ধরনের একীভূতকরণের সমস্যা বহুবিধ। প্রথমত, গোড়ায় হাত না দিয়ে, অর্থাৎ ঋণ খেলাপি বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত না নিলে ভালো ব্যাঙ্কগুলোও এখন ধসে যাবে।

দ্বিতীয়ত্, এই ধরনের একীভূতকরণ করে মূল সমস্যাকে চাপা দেয়ার একটা চেষ্টা করা হবে। দেখানো হবে যে নীতিনির্ধারকরা সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করছেন। বাস্তবে যদিও তা আরো বাড়বেই। আর, ক্ষমতাসীন ঋণখেলাপীরা আবারও নতুন করে লুটের সুযোগ পাবে। 

একীভূতকরণ হলে দুর্বল ব্যাংকগুলোর প্রভাবে সবলগুলোও ধসে যাবে। অনেকটা ভাইরাসের ছোবলে সুস্থ শরীর অসুস্থ হবার মতো। দুর্বল ব্যাংকের মন্দ ঋণগুলো সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। এর ফলে অধিগ্রহণকারী সবল ব্যংকগুলোর উপর মন্দ ঋণের কোন প্রভাব পড়বে না বলেও বুঝ দেয়া হচ্ছে।  

কিন্তু আসলেই যদি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলো মন্দ ঋণ ক্রয়ে আগ্রহী হয়, তবে দুর্বল ব্যাংকগুলো নিজেরাই এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে পারতো সে ক্ষেত্রে একীভূতকরণের প্রয়োজনীয়তা ছিলো না। তাহলে? এই একীভূতকরণের কারণ কি? 

তলিয়ে দেখলেই বোঝা যায়, এই ধোয়া তুলে আসলে ক্ষমতাশালী ঋণখেলাপীদের বেলআউট বা মওকুফ করে দেয়া হবে। এরা আগের লুটের টাকা হালাল করে আবার নব উদ্যমে নতুন লুটে নামবে, অন্যদিকে সাধারন জনগণকে এইসব একীভূতকরণের ভুজং দিয়ে ভুলায়ে রাখা হবে। 

আমরা একই অবস্থা দেখেছি শেয়ারবাজারের বেলাতেও। বারংবার কারসাজি করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়া হয়েছে। কিন্তু যারা এই লুটের সাথে জড়িত তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার ব্যবস্থা তো নেয়া হয়ই নাই, উলটো এদের নতুন করে সুযোগ দেয়া হয়েছে।

আরেকবার লুটের উৎসব আমরা দেখবো অসহায় হয়ে। শেষতক আরেক দফা নিঃস্ব হবে অর্থনীতি।

অনুসরণ করুন