আরো একটা বাংলা নববর্ষ চলে আসলো। এই অঞ্চলের কৃষিভিত্তিক জীবনযাপনে পয়লা বৈশাখ এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি সংস্কৃতির মতো এইখানেও নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া হয়। তবে, নতুন বছর কেবল পোষাকী বরণের বিষয় নয়। নতুন বছর মানে নতুন করে শুরু। বিগত বছরের ভুল ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে, গ্লানি থেকে মুক্ত হয়ে, নতুন স্বপ্ন নিয়ে শুরু করার উদ্যম। এই কারনে দেখা যায়, আমাদের সংস্কৃতিতে হালখাতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এইদিন ব্যবসায়ীরা পুরোন খাতার হিসাব বন্ধ করেন। দেনাপাওনার হিসাব চুকাতে চেষ্টা করেন। নতুন খাতা খোলেন। জীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রেই নতুন খাতা খুলে আমরাও এগিয়ে যেতে চাই সামনে।
কেবল বাংলা নববর্ষ নয়, এইদিন বাংলাদেশের অন্যন্য অনেক গোষ্ঠীও নতুন বছরের উৎসব পালন করেন। পাহাড়জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বিজু উতসবের ফুলেল সৌরভ। আবার হিন্দুরা পালন করেন চড়ক পূজা, চৈত্র সংক্রান্তি। বহুজাতি, বহুমতের বাংলাদেশে এই সমস্ত ঐতিহ্য আর উৎসব পাশাপাশি চলে। এইটাই বহুত্ববাদের বাংলাদেশ।
তবে, অতি সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যেমে দেখা যায়, এইসব ছাপিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বের হওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়েই যতো আলোচনা। কেউ কেউ একে হিন্দুয়ানী আখ্যা দিয়ে বর্জনের হুমকি দেন, অন্যদিকে কেউ কেউ একে হাজার বছরের সংস্কৃতি বলে হাস্যকর বারফট্টাই করেন।
এই হুমকি আর পালটা ফাঁপা গৌরবের মাঝে হারিয়ে যায় মানুষের উৎসবের আমেজ। শোভাযাত্রার পক্ষের লোকেরা বলেন, তাঁরা নাকি অপশক্তি দূর করার জন্য, মঙ্গলের কামনায় এই প্রথা পালন করেন। পেচা,দানব, ভূতেদের ছবি নিয়ে হাঁটেন। অথচ দেখা যায়, সেই শোভাযাত্রায় দেশের আসল রাক্ষস, গণতন্ত্র হরণকারীদের নিয়ে আলাপ নাই।
গতবছর সংবাদমাধ্যেমে এসেছিলো, গণতন্ত্রের দাবিতে অল্প কিছু মানুষ নাকি এই যাত্রায় ব্যানার নিয়ে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁদের পিটিয়ে লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগ। কিন্তু, এরপক্ষের লোকেরা এই নিয়ে উচ্চবাচ্য করেননি। উলটো তাঁদের একটা বড় অংশ দেখাতে চান যে, যারা শোভাযাত্রার বিরোধী তাঁরা জঙ্গি। এইসব জঙ্গিদের রুখতে আওয়ামী লীগকেই আজীবন ক্ষমতায় রাখতে হবে। সংগত কারণেই, এই দুর্বল দলীয়করণ শোভাযাত্রা ব্যাপারটাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। উতসবের বদলে নেমে আসে বিভক্তি।
জহির রায়হান বলেছিলেন, আসছে ফাগুনে আমরা দ্বিগুণ হবো। সেই রাজনৈতিক চেতনায় উদ্ভাসিত হোক নববর্ষ। আসছে বছর আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবো। দেশকে অপশাসন মুক্ত করবো।