Logo
Logo
×

অভিমত

বিএনপি ফিরলে জনতাও ফিরবে

Icon

ইয়াসির আরাফাত

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০৪ পিএম

বিএনপি ফিরলে জনতাও ফিরবে

আবারও নির্বাচন কেন্দ্রীক একটি প্রশ্নের মুখোমুখি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। আর তা হচ্ছে ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ ‘নির্বাচনের’ পর মে মাস থেকে শুরু হতে যাওয়া উপজেলা নির্বাচনও কি বিএনপি বর্জন করবে? বিএনপির শীর্ষ নেতারা এ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার কথা জানিয়েছেন। তারপরও রাজনৈতিক মহল, সুশীল সমাজ এমনকি সাধারণ মানুষের মধ্যে এই প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছে।

এ কথা ঠিক যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে যে নির্বাচন হচ্ছে তাতে বিএনপির অংশগ্রহণের কোনো অর্থ হয় না। জাতীয় বা স্থানীয় যে নির্বাচনেই বিএনপি অংশ নিয়েছে সরকার তাতে নগ্নভাবে হস্তক্ষেপ করেছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিএনপি একাধিকবার অংশ নেয়, কিন্তু সেসব নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ও নেতাদের কী অবস্থা হয়েছিল তা সবারই জানা। আরও কয়েকটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনেও একই অবস্থা হয়েছে। আর ফলাফল! তা যে ‘প্রোডাক্ট’ তা তো দিবালোকের মত স্পষ্ট। 

প্রতিবাদ হিসেবে বিএনপি যখন নির্বাচন বর্জন করে তখন নির্বাচন হয় ‘দেখার মত কাণ্ড’। ভোট শতকরা ৫ ভাগই পড়ুক বা ১৫ ভাগ, ওটা বেড়ে ৫০ ভাগ হয়ে যায়। ‘আমরা আর মামুরা’ কিংবা ‘আমি আর ডামি’ নির্বাচন হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সে সব নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীনরা আবার নির্বাচন নিয়ে রসিকতা করেন! ‘এর থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন কি হয়?’ এমন প্রশ্ন সংবাদ সম্মেলনে ছুঁড়ে দেয়া হয় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যেই! হাস্যকর এসব কাণ্ড সরকারের শীর্ষস্থান থেকেই করা হচ্ছে। মানুষকে বোকা বানানোর জন্যই এসব করা হয়। অবশ্য তারা মানুষকে যতটা বোকা ভাবেন মানুষ তো আর অতোটা বোকা নয়, তাই এই প্রচার আর প্রোপাগান্ডায় মানুষ বিমোহিত হয় না, সরকারের ক্ষমতাবানদের মত আহ্লাদে গলে যায় না মানুষ। তবে প্রতিবাদ আর প্রতিরোধহীনভাবে এই অপকর্মগুলো সরকার ও তাদের দলীয় লোকজন যে বারবার করে যাচ্ছে; তা দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করছে গণতন্ত্রের চেতনাকে বিপন্ন করছে।

দেশে গণতান্ত্রিক চেতনা বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা কী হওয়া উচিত তা নিয়ে বিএনপির ভাবার দরকার আছে। বিএনপির নির্বাচন বর্জন আওয়ামী লীগের জন্য অধিক থেকে অধিকতর স্বৈরতান্ত্রিক হওয়ার পথ প্রশস্ত করে দিচ্ছে কি-না তা নিয়ে ভাবতে হবে বিএনপিকে।

এটা দিবালোকের মত স্পষ্ট, বিএনপির নির্বাচনে না যাওয়াটা আওয়ামী লীগের কাছে কোনো আক্ষেপ নয়, তাদের কাছে এটা কোনো হতাশার বা বিব্রতকর বিষয় নয়, বরং এটা তাদের জন্য একটা ‘সুযোগ’। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের জন্য সুযোগ, আবার আওয়ামী লীগের ক্ষমতালিপ্সু বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের কাছেও এটি হচ্ছে নিশ্চিতভাবে এমপি, চেয়ারম্যান, মেয়র নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ। ভোট ডাকাতির বদলে ভোটারবিহীন নির্বাচন আওয়ামী লীগকে অপেক্ষাকৃত কম কলঙ্কিত করছে। আওয়ামী লীগের চরিত্র সবারই জানা, তবে বিএনপি বারবার নির্বাচন বর্জন করায় আওয়ামী লীগের আসল চেহারাটা চাপা পড়ে যাচ্ছে, তাই বিএনপিকে গভীরভাবে ভাবতে হবে, তারা কি বারবার নির্বাচন বর্জন করে আওয়ামী লীগের আসল চেহারা বিশ্ববাসীর কাছে আড়ালে রাখার সুযোগ দেবে নাকি নির্বাচনে গিয়ে তাদের দস্যুতার চেহারাটা উন্মোচন করবে?

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব বিএনপিকে ক্ষমতার বাইরে রেখে রাজনীতি থেকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়, তারা বিএনপিকে রাজনীতি করার জন্য কোনো ‘স্পেস’ দিচ্ছে না। একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশে সরকারের দায়িত্ব বিরোধী সব মতের রাজনৈতিক ‘স্পেস’ তৈরি করে দেয়া, কিন্তু বর্তমান সরকার কোনো চরিত্রের সরকার? বিএনপি নেতারাই তো বলছেন, দেশে উত্তর কোরিয়ার মতো শাসন চলছে। শেখ হাসিনার সরকারকে তুলনা করছেন কিম জং উনের সাথে। তাহলে তারা কী করে আশা করে এ সরকার বিএনপিকে ‘স্পেস’ দেবে? নির্বাচন, রাজনীতি কোনো কিছুতেই বিএনপিকে জায়গা দেবে না আওয়ামী লীগ- এমন বাস্তবতা মেনেই বিএনপিকে গণতন্ত্র পুণরুদ্ধার বা জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, তারা আন্দোলনেই আছেন। বিএনপিকে জবরদস্তি করে রাজপথ থেকে সরিয়ে দিয়েছে সরকার এটা একটা বাস্তবতা। ডামি প্রার্থীর নির্বাচনের মাধ্যমে ফের ক্ষমতার জবরদখল ধরে রেখেছে শেখ হাসিনার সরকার। নির্বাচন নির্বাচন যে খেলাটা তারা গত দেড় দশক ধরে খেলছে তেমন একটি খেলা নিয়ে ফের জনগণের সামনে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে খেলা বানিয়ে ফেলেছে, এ অবস্থা ততদিন পর্যন্ত চলবে যতদিন না নির্বাচনের মাঠে তাদের সামনে বুক চিতিয়ে কেউ না দাঁড়ায়। আসছে উপজেলা নির্বাচনটা আওয়ামী লীগ যাতে পুরোপুরি খেলায় পরিণত না করতে পারে সে জন্য বিএনপির অনেক কিছু করার আছে, তার মধ্যে সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নির্বাচনী ময়দানে ফিরে আসা। বিএনপি নির্বাচনী ময়দানে ফিরলে জনতাও ফিরবে। 

অনুসরণ করুন