Logo
Logo
×

সাক্ষাৎকার

ভারতের নির্বাচনে কমছে ভোটার, মোদী শিবিরে চিন্তার ভাঁজ 

Icon

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২০ পিএম

ভারতের নির্বাচনে কমছে ভোটার, মোদী শিবিরে চিন্তার ভাঁজ 

বৈরি আবহাওয়ার মধ্যে চলছে ভারতের লোকসভা নির্বাচন। গত ২৬ এপ্রিল দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ সম্পন্ন  হয়েছে। আরও ৫ দফা ভোটগ্রহণ শেষে আগামী ৪ জুন ফলাফল শেষ ঘোষণা করা হবে। ৫৪৩টি আসনের মধ্যে যে জোট ন্যূনতম ২৭২টি আসন পাবে তারাই সরকার গঠন করবে।

এবারের লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মোদী ম্যাজিক ভালো ফল দিচ্ছে না। প্রথম দফার চেয়ে দ্বিতীয় দফায় ভোটার উপস্থিতি আরও কমেছে। কেন্দ্রে ভোটার টানতে সরকার ও নির্বাচন কমিশন নানা কৌশল করছে। অনেকেই বলছেন, নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পথেই হাঁটছে ভারতের জনগণ। 

ভারতের নির্বাচন নিয়ে বাংলা আউটলুকের সঙ্গে কথা বলেছেন ডয়েচেভেলের ফরেন করেসপন্ডেন্ট সামন্তক ঘোষ আবীর। টেলিফোনে সাক্ষাতকারটি নিয়েছে বাংলা আউটলুকের ঢাকা অফিস। 

বাংলা আউটলুক : ভারতের চলমান নির্বাচনী পরিবেশ কেমন দেখছেন? 

সামন্তক ঘোষ আবীর : প্রায় পুরো ভারতেই এখন বৈরি আবহাওয়া বিরাজ করছে। তীব্র গরমে দিল্লিসহ বিভিন্ন শহরে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন কাজ কর্ম বিঘ্নিত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছে এখানকার কৃষি। যদিও সবচেয়ে বেশি গরম পড়ে যে উত্তর প্রদেশে সেখানকার মানুষ এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে শিখেছে। এর মধ্যেই চলছে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা। বৃহৎ জাতীয় দলগুলোসহ রাজ্যভিত্তিক দলগুলো জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তাদের সর্বোচ্চ কৌশল দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।  

বাংলা আউটলুক : দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ শেষ হলো। বলা হচ্ছে ভোটার উপস্থিতি কম। কারণ কি? 

সামন্তক ঘোষ আবীর : নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত হিসাবে এ দফায় ভোট পড়েছে ৬৪ শতাংশ। প্রথম দফায় যেখানে ভোট পড়েছিল প্রায় ৭০ শতাংশ। এর একটি কারণ হতে পারে বৈরি আবহাওয়া। অন্যটি হতে পারে এবার ভোটগ্রহণ হয়েছে উত্তর-পূর্ব ও পাহাড়ি অঞ্চলে। যেখানে স্বাভাবিকভাবেই মানুষ ভোট কেন্দ্রে কম যায়। উত্তর প্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রে ভোট হয়েছে। উত্তর প্রদেশে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৫৫ শতাংশের মতো, যা কিনা প্রথম দফার ভোটের চেয়েও ৬ শতাংশ কম। বিহারেও ভোট পড়েছে ৫৫ শতাংশ। মহারাষ্ট্রে আরও কম, সাড়ে ৫৪ শতাংশের মতো। মধ্যপ্রদেশে সামান্য বেশি, সাড়ে ৫৭ শতাংশ। 

বাংলা আউটলুক : বলা হচ্ছে ভোটে মানুষের আগ্রহ কমছে, এটা কতটুকু সত্য? 

সামন্তক ঘোষ আবীর : দেখুন ভারত একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এখানে শত কোটির বেশি ভোটার। বরাবরই এখানকার মানুষ উৎসবের মেজাজে ভোট দেয়। এবারো তার ব্যতিক্রম হচ্ছে বলে আমার মনে হয়নি। মোদী শাসনামল একটা দীর্ঘ সময় দেশ পরিচালনা করছে। তাদের স্ট্র্যাটেজি নিয়ে নানান ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। ভোটে মানুষের আগ্রহ কতটা কমলো সেটি বলা যাবে সবগুলো পর্বের ভোটগ্রহণ শেষে। 

বাংলা আউটলুক : ‘মুসলমান জুজু’র কথা বলা হচ্ছে। কেন্দ্রে হিন্দু ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কংগ্রেসের সঙ্গে মুসলামনদের মিলিয়ে দিতে চাইছে বিজেপি। তাতে কাজ হবে বলে আপনি মনে করেন? 

সামন্তক ঘোষ আবীর : দেখুন মুসলমান ভোটার টানতে একেক রাজ্যে একেক ধরনের কৌশল নিয়ে থাকে রাজনৈতিক দলগুলো। যেমন বিজেপি উত্তর প্রদেশে হিন্দুদের এককভাবে টানতে মুসলিম বিদ্বেষ প্রকাশ করে। আবার আসামে তারা মুসলমানদের ভূমিপুত্র বানানোর প্রতিশ্রুতি দেয়। মূলত সবই হলো রাজনৈতিক কৌশল। আসামে এনআরসি হয়ে গেছে। এবার সেখানকার মুসলমানরা বিজেপিকে ভোট দিচ্ছে না বলেও মনে হচ্ছে। ত্রিপুরাতেও বিজেপি শিবিরের মুসলিম ভোট কমবে। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম ভোট কখনোই বিজেপির ছিলো না। তাই এবার তেমনই থাকছে বলে মনে করছি। পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৩০ শতাংশ ভোটের বেশিরভাগই মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেসের। 

বাংলা আউটলুক : মুসলিম ভোটাররা কি ভোটের ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ? 

সায়ন্তক ঘোষ আবীর : প্রকৃতপক্ষে ভারত একটি বৈচিত্র্যময় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এখানে এক রাজ্য থেকে অপর রাজ্যের পরিস্থিতি ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন ধরুন ২০২২ সালে উত্তর প্রদেশ বিধান সভা নির্বাচনে মুসলিম নারীরা দল বেঁধে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিল। এবার তেমনটি হচ্ছে না। এবার তারা সেখানকার সমাজবাদী পার্টির দিকে ঝুঁকছেন। 

বাংলা আউটলুক : পশ্চিমবঙ্গে বাম-তৃণমূল জোটের লক্ষ্য কী? 

সায়ন্তক ঘোষ আবীর : ভারতে বামদের পরিধি সংকুচিত হয়ে আসছে। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে প্রার্থী দিয়েছে তারা। ভোটে এর কিছুটা প্রভাব হয়তো পড়বে। তবে তৃণমূলের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ রাজ্যে মমতার সংখ্যা গরিষ্ঠতাই স্পষ্ট। যদিও সাম্প্রতিক কিছু ইস্যুতে তৃণমূলের প্রতি মানুষের অনীহাও রয়েছে। এছাড়া বাম শাসিত কেরালাতে তারা ভালো করবে বলে মনে হয়। 

বাংলা আউটলুক : মমতার দুর্গে বিজেপি হানা কতোটা সহজ হতে পারে? 

সায়ন্তক ঘোষ আবীর : অন্যান্য রাজ্যে তৃণমূল অন্যদের সঙ্গে জোট করলেও পশ্চিমবঙ্গে মমতার স্ট্র্যাটেজি ভিন্ন। এখানে বিজেপি, কংগ্রেস এবং তৃণমূল একে অপরের বিরুদ্ধে লড়ছে। দুর্নীতিসহ নানা ইস্যুতে এখানকার ভোটারদের মধ্যে মমতা বিমুখতা রয়েছে। আলাদা আলাদা ভোট করলে হয়তো মমতা সেই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারবেন। 

বাংলা আউটলুক : গুরুত্বপূর্ণ সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। 

সায়ন্তক ঘোষ আবীর : আপনাকে এবং বাংলা আউটলুককেও ধন্যবাদ।

অনুসরণ করুন