Logo
Logo
×

সাক্ষাৎকার

ইরান-ইসরায়েল কেউই যুদ্ধে জড়াবে না!

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৫৩ পিএম

ইরান-ইসরায়েল কেউই যুদ্ধে জড়াবে না!

বিশ্ব রপ্তানির জন্য হরমুজ এবং বাবাল মান্দেপ প্রণালি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর বিকল্প বাণিজ্যিক পথ নেই। আর এই দুটি প্রণালিতে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ইরানের। তাই তেহরান-তেলআবিব সংকট আরো ঘনীভূত বা যুদ্ধে জড়ালে এই দুই প্রণালি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেত পারে ইরান। এতে বিশ্ব অর্থনীতির সাথে সাথে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি হুমকিতে পড়বে। তাই বিশ্ব অর্থনীতি বিবেচনায় পশ্চিমারাও যুদ্ধে না জড়ানোর জন্য চেষ্টা করবে। একইভাবে ইরান-ইসরায়েলও যুদ্ধে জড়াবে না বলে মনে করছেন রেডিও তেহরানের সিনিয়র সাংবাদিক সিরাজুল ইসলাম। আর তেহরানে অবস্থানরত সিনিয়র সাংবাদিক গাজী আব্দুর রশিদ বলছেন, ইসরায়েল বা পশ্চিমা শক্তি তেহরানের দিকে বাঁকা দৃষ্টি দিলে এক ন্যানো সেকেন্ড সময় নেবে না ইরান।

হরমুজ প্রণালির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ইরানের হাতে। আর বাবালমান্দেপ প্রণালির নিয়ন্ত্রণ হুতিদের হাতে; অর্থাৎ পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ ইরানের হাতেই রয়েছে। ইসরায়েল ইরানের সাথে যুদ্ধে জড়ালে এই দুই প্রণালিই বন্ধ হয়ে যাবে। এই দুই প্রণালি বন্ধ হয়ে গেলে এই জলপথে কোনো বাণিজ্যিক বা সামরিক জাহাজ চলাচল করতে পারবে না। সেটা ইরান বন্ধ না করলেও স্বাভাবিক ভাবেই বন্ধ হয়ে যাবে। এতে শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয় ইউরোপ, আমেরিকা, দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার সমগ্র অর্থনীতি হোঁচট খাবে। 

কারণ আটলান্টিক বা প্রশান্ত মহাসাগর; যে পথের বানিজ্যই হোট এই দুই প্রণালি পারি দিয়েই যেতে হবে। আর এটা বুঝতে পেরেই আমেরিকা ইসরায়েলকে সমর্থন দিলেও ইরানের সাথে যুদ্ধের বিপক্ষে জো বাইডেন। একই পরিস্থিতি এশিয়ার শক্তিধর দেশগুলোরও।

এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েল যদি আমেরিকাকে যুদ্ধে পাশে না পায়, সে ক্ষেত্রে পশ্চিমা কোনো দেশই ইসরায়েলের পাশে থাকবে না। কারণ নিজেদের অর্থনীতি বাঁচিয়েই পশ্চিমারা কারো পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নেয়। আর যদি যুদ্ধে জড়িয়েই যায় পশ্চিমা জোট, সে ক্ষেত্রে যুদ্ধ শুধু আরব বিশ্বেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। সরা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। 

এক্ষেত্রে ইরানের অর্থনীতির তেমন কোনো সম্ভাবনও নেই। তবে, এক ধরনের হুমকিতে পড়বে। তবে তুই প্রণাণি বন্ধ হয়ে গেলে বিশ্ব বাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে যেতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদে উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়বে বহুগুণ। সে ক্ষেত্রে ইসরায়েলই অর্থনৈতিক ভাবে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে। এটা ইসরাইলও জানে, সে কারণে ইসরায়েলও ইরানের সাথে যুদ্ধে জড়াবে না। ইরানও অবশ্য যুদ্ধে জড়াতে চাইছে না। ইরানের আক্রমণ শুধুমাত্র প্রতিশোধ নেয়ার জন্যই করেছে। যুদ্ধ করার জন্য নয়। আর ইসরায়েলও নিজেদের ক্ষমতা বা পশ্চিমা মিত্র শক্তি তার সাথে আছে এটা দেখানোর জন্যই ইরানের আকাশে ক্ষুদ্র তিনটি ড্রোন পাঠিয়েছিল। ইরান সেটা সফলতার সাথেই ভূপাতিত করেছে। 

ইরানের জাতীয় সংবাদ মাধ্যম রেডিও তেহরানের সিনিয়র সাংবাদিক সিরাজুল ইসলাম মনে করেন, উত্তেজনা কিছুদিন থাকলেও ইরান-ইসরায়েল কেউই এই মুহূর্তে যুদ্ধে জড়াবে না। আর পশ্চিমা শক্তিও সেটা চাইছে না। এর পরও যদি যুদ্ধ বেঁধেই যায়, সে ক্ষেত্রে ইরান ছাড় দেবে না।
 
তার মতে, আরব দেশগুলো তাদের নিজেদের স্বার্থেই ইরানের পাশে থাকবে। জর্ডান, সৌদি আরব, মিশর, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাতও ইরানের সাথে থাকবে। এর সাথে রাশিয়া, চীনও ইরানকে সহায়তা করবে। এশিয়ার একমাত্র দেশ ভারত হয়তো উপরে উপরে ইসরায়েলকে সমর্থন দিতে পারে। কিন্তু যুদ্ধ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘে ভোটাভোটি উঠলে ভারত ভোটদান থেকে বিরত থাকবে। আমেরিকাসহ পশ্চিমা অধিকাংশ দেশই এই পথে হাঁটবে বলে মনে করেন সিরাজুল ইসলাম। 

২০ এপ্রিল ভোর বেলা ইরানের ইস্পাহান শহরে ইসরাইল যে তিনটি ড্রোন পাঠিয়েছিল, তাও সফল ভাবে ভূপাতিত করেছে তেহরানের সামরিক বাহিনী। চলমান উত্তেজনা পরিস্থিতিতে ইরানের সাধারণ মানুষের অবস্থান বা ইরান জুড়ে কোনো নিরাপত্তা ঘাটতি আছে কী না, তা জানার জন্য বাংলা আউটলুক তেহরানে অবস্থানরত সিনিয়র সাংবাদিক গাজী আব্দুর রশিদের সঙ্গে কথা বলেছে। 

আব্দুর রশিদ বলছেন, এ নিয়ে ইরানের জনগণের মধ্যে কোনো ধরনের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা নেই। জনমনে কোনো ধরনের শঙ্কাও নেই। বরং ইরানের সরকারের অবস্থানের প্রতি দৃঢ় সমর্থন এবং আস্থা রয়েছে নাগরিকদের। তেহরানে অবস্থানরত কিছু বাংলাদেশি নাগরিকও রয়েছেন, তাদেরও কোনো নিরাপত্তা হুমকি নেই বলে জানান আব্দুর রশিদ। 

ইসরায়েলে ১৪ এপ্রিলের হামলা বিষয়ে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরানের শীর্ষ কর্তৃপক্ষের অনেকের সাথে আব্দুর রশিদ কথা বলেছেন জানিয়ে বলেন, তেহরান বেশ আত্মপ্রত্যয়ী। ইসরায়েলের আকাশ সীমায় হামলা এবং লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে তেহরান তাদের সবচেয়ে ছোট ছোট অস্ত্র ব্যবহার করেছে। এর চেয়েও বহুগুণ শক্তিশালী অস্ত্র ইরানের হাতে রয়েছে। ইসরায়েল বা পশ্চিমা শক্তি তেহরানের দিকে বাঁকা দৃষ্টি দিলে এক ন্যানো সেকেন্ড সময় নেবে না ইরান। বিপুল শক্তিতে ইসরায়েলের ওপর শক্ত হামলা করবে। সে প্রস্তুতিও রয়েছে ইসলামিক রিপাবলিকানদের। 

সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, ইসলামিক রিপাবলিক এই দেশটির মধ্যে তীব্র জাতীয়তাবাদ এবং জাতীয়তাবোধ জাগ্রত। তারা দেশটির শাসকদের ওপর আস্থা রাখেন এবং কোনো ধরনের ভিতি তাদের মধ্যে কাজ করছে না বলে তেহরানের সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছেন গাজী আব্দুর রশিদ।

অনুসরণ করুন