Logo
Logo
×

সাক্ষাৎকার

ভারতীয় শাড়ির ব্যবসায় ধস নেমেছে

Icon

ঢাকা অফিস

প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:০৩ পিএম

ভারতীয় শাড়ির ব্যবসায় ধস নেমেছে

হেলাল উদ্দিন। ফাইল ছবি।

এবারের ঈদ বাজার অন্যান্য বারের তুলনায় আলাদা। বিগত বছরগুলোতে ক্রেতাদের পছন্দ ও চাহিদার কারণে ভারতীয় পণ্য ছিল পছন্দের শীর্ষে। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতারা ভারতীয় পণ্য কিনছেন না। এর পাশাপাশি বাজারে ভারতীয় পণ্য বয়কটের প্রভাবও পড়েছে। বিশেষ করে ভারতীয় শাড়ি ব্যবসায় এবার ধস নেমেছে। দেশের বাজার ও অর্থনীতিসহ ভারতীয় শাড়ি বিক্রিতে ধসের কারণ সম্পর্কে বাংলা আউটলুকের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা আউটলুকের ঢাকা প্রতিনিধি।

বাংলা আউটলুক: দেশের আর্থিক দুরাবস্থার মধ্যে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ব্যবসা কেমন হলো?

হেলাল উদ্দিন: আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকার কারণে এবার মধ্যবিত্তরা ঈদের বাজারে ব্যাপক সংখ্যায়  আসেনি। রোজার মাসের শেষ সময়ে কেনাকাটায়ও এই শ্রেণীর লোকজনকে দেখা যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের জন্য এটাই সবচেয়ে খারাপ খবর। দেশের সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী মধ্যবিত্ত, তারা এখন ঈদের বাজারে অনুপস্থিত। যে কোনো দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী মধ্যবিত্তদের কেনাকাটায় টিকে থাকে ব্যবসায়ীরা। দোকানিদেরও খরচ উঠে আসে না এমনটা হলে। তবে ভালো খবর হচ্ছে   নিন্নবিত্তরা ফুটপাতের বাজারে যেতে দেখেছি। কারণ সীমিত আয়ের নিম্নবিত্তদের শপিংমলে গিয়ে বেশি খরচ করার ক্ষমতা নেই।

বাংলা আউটলুক: বিরোধীদলসহ বিএনপির ‘ভারত খেদাও’ আন্দোলন ঈদের বাজারে কোনো প্রভাব ফেলেছে কি?

হেলাল উদ্দিন: দেশের ঈদের বাজারে ‘ভারত খেদাও’ আন্দোলনের তেমনভাবে বড়  কোনো প্রভাব আমি দেখিনি। দেশের এক বিশাল জনগোষ্ঠী এই রাজনৈতিক ইস্যুটার ব্যাপারে ভালোভাবে  অবগত কি-না তা নিয়েও আমার সন্দেহ রয়েছে? তবে মার্কিন ডলারের দাম বেশি হওয়াতে দেশে ভারতীয় পণ্য আমদানি বেশি হচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলতে এক ডলারে  খরচ ১১১ টাকা থেকে ১২০ টাকা পড়ে যায়। তাই ইন্ডিয়ান পণ্যের দাম ডলারের দাম বাড়ার সাথে সাথে বেড়ে যায়। ফলে দেশে ইন্ডিয়ান পণ্যের আমদানি কম হচ্ছে। উদাহরণ হিসাবে ভারত থেকে খাদ্যদ্রব্য বিশেষ করে চাল আমদানি ৯৩ শতাংশ কমে যাওয়ার বিষয়টা এখানে উল্লেখ করা যায়।  মজার বিষয় হলো মার্কিন ডলারের সংকটের কারণে ইন্ডিয়ান পণ্যের দাম স্থানীয় পণ্যের থেকে বেশি। ফলে বাংলাদেশের এবারের ঈদ বাজারে ক্রেতারা প্রতিবেশী দেশের পণ্য কিনছে না। তবে এ বিষয়টি ভুলে গেলে চলবে না, দেশীয় পণ্যের মান আগের চেয়েও অনেক ভালো হয়েছে।  এজন্য দেশীয় পণ্যের দিকে ক্রেতারা ঝুঁকেছে। দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠীর এই ঝোঁক পজিটিভ হিসাবে দেখতে হবে। যা আমাদের অর্থনীতির জন্যও ভালো।

বাংলা আউটলুক: ঈদকে সামনে রেখে দেশের শাড়ির ব্যবসায় শুনেছি ধস নেমেছে?

হেলাল উদ্দিন: সবচেয়ে খারাপ অবস্থা শাড়ির ব্যবসায়। বাংলাদেশে বিশেষ করে ভারতীয় শাড়ির ব্যবসায় একেবারে ধস নেমেছে। গুজরাট এবং রাজস্থানের শাড়ি বাধনি, লক্ষ্ণৌ শাড়ি চিকন,  রাজস্থান শাড়ি কাটা দারিয়া, বারানসীর তাঁত জামদানি শালু, বেনারসি বিক্রি নাই বললেও ভুল হবে না। এমনিতেই শাড়ি পরা মহিলাদের সংখ্যা কমে গেছে। আপনি যদি কোনো ব্যস্ত রাস্তার দিকে তাকান দেখবেন শাড়ি পরা মহিলাদের সংখ্যা কম। কারণ বেশিরভাগই সালোয়ার কামিজ পরতে সাচ্ছন্দ্য বোধ কর। শাড়ি কেউ পড়তে চায় না। শাড়ি পড়া তো ঝামেলাও। আমার মনে হয়, শতাংশ হারে শাড়ি পরা মহিলাদের সংখ্যা ২০ শতাংশ কমেছে।

বাংলা আউটলুক: মূল্যস্ফীতি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও আয় উর্পাজনকে মারাত্মকভাবে আঘাত করেছে। এ বক্তব্যে আপনার কী মত?

হেলাল উদ্দিন: মূল্যস্ফীতি কমাতে না পারলে দেশের সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আবার পূর্বের  অবস্থায় ফিরে আসবে না। কিন্তু খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে আছে। আমরা উদাহরণ হিসেবে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিকে বিশ্লেষণ করে দেখতে পারি। কিভাবে তারা দেশের মূল্যস্ফীতিকে কমিয়ে নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশের নীতি-নির্ধারকরা শ্রীলঙ্কাকে অনুসরণ করতে পারে। অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতির হার দুই বছরের মধ্যে এই প্রথম এক অঙ্কের ঘরে নেমে এসেছে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে দেশটির মূল্যস্ফীতি ছিল ৬৯ দশমিক ৮ শতাংশ, যা চলতি বছরের জুলাই মাসে ৬ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতির হার এখন বাংলাদেশের চেয়ে কম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশে। জানুয়ারিতে এটি ছিল ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। প্রায় ১৮ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির এই উচ্চহার চলছে।

বাংলা আউটলুক: শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশের অর্থনীতি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কী ধরনের  ব্যবস্থা নেয়া যায়?

হেলাল উদ্দিন:  আমরা শ্রীলঙ্কার মতো আমাদের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করাতে পারি। এ ব্যাপারে আমাদের সৎ সাহস থাকতে হবে। কিছু রাজনৈতিক সিদ্বান্তের বিষয় আছে। মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে সরকারকে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরো উন্মুক্ত করতে হচ্ছে। সব ধরনের সংরক্ষণ নীতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে আমাদের। অথনৈতিক ও বাণিজ্যিক সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত নিতে হবে।

এজন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে বিভিন্ন আর্থিক বিষয়ে দেশের ব্যবসায়ীদের সাথে বসে সিদ্বান্ত নিতে হবে। স্থানীয় বাজারে নিত্যপণ্যসহ যে কোনো পণ্যের দাম কমিয়ে রাখা যায়। সরকারের এই দুইটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সাথে অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন আর্থিক ও বাণিজ্য ইস্যুর মধ্যে সমন্বয় থাকত হবে। শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে সেই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকর গভর্নরের বিরাট এবং স্বাধীন ভূমিকা আছে।

অনুসরণ করুন