Logo
Logo
×

সাক্ষাৎকার

‘রাজনীতির শেষ প্রান্তে চলে এসেছি আমরা, এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র’

Icon

ঢাকা অফিস

প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫৫ পিএম

‘রাজনীতির শেষ প্রান্তে চলে এসেছি আমরা, এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র’

রকিবুল ইসলাম বকুল ১৯৮৪ সাল থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবদী দলের রাজনীতির সাথে জড়িত। দীর্ঘ এই পথচলায় নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এখন দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। নব্বইয়ের স্বৈরাচার-বিরোধী অন্দোলন যখন তুঙ্গে, সেই সময়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল সংসদের জিএস নির্বাচিত হন তিনি। দীর্ঘ এই পথপরিক্রমায় একাগ্রতা ও সততার সাথে দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। এক-এগারোর কালো সময়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে যখন চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছিল এবং পরে আওয়ামী লীগ সরকারের নানা চক্রান্ত ভেদ করে পথ চলছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির সাথে। চলমান রাজনীতির নানা বিষয় নিয়ে বাংলা আউটলুকের সাথে খোলামেলা কথা বলেন খুলনা শহরে জন্ম নেওয়া এই নেতা। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বাংলা আউটলুকের ঢাকা প্রতিনিধি।

বাংলা আউটলুক : চল্লিশ বছর হয়ে গেল বিএনপির সাথে পথ চলার, কোন বিষয়টি আপনাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছিল বা এখনো করছে?

রকিবুল ইসলাম বকুল : প্রেরণার সবচেয়ে বড় জায়গাটা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, এ দেশটাকে স্বাধীন করেছেন, তার কর্মময় জীবন, সততা, নিষ্ঠা এবং দেশপ্রেম আমাকে অনুপ্রাণিত করে সবসময়। দেশপ্রেমের পরীক্ষায় যদি কাউকে এক নম্বরে রাখতে হয়, তাহলে তিনি জিয়াউর রহমান। তলাবিহীন ঝুঁড়ি বলা হতো বাংলাদেশকে; সেখান থেকে বের করে এনে আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নদ্রষ্টা বলা হয় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে। তার নীতি-আদর্শ দূরদর্শিতা সবই আমাকে অনুপ্রাণিত করে। এখনো সেই প্রেরণায় এগিয়ে চলছি।

বাংলা আউটলুক : দীর্ঘ এই পথচলায় নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়েছেন, রাজনীতি থেকে বা এই দল থেকে প্রাপ্তি কতটুকু?

রকিবুল ইসলাম বকুল : যদি লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ঠিক থাকে এবং ইমানি শক্তি ঠিক থাকে তাহলে দলের আদর্শকে বুকে ধারণ করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো অসম্ভব কিছু না।

বাংলা আউটলুক : জিয়াউর রহমান সামরিক ব্যরাকের মধ্যে থেকেও সাড়ে সাত কোটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে ‘উই রিভোল্ট’ বলেছিলেন; বর্তমান বাস্তবতায়ও এমন একটি ঘোষণা কি জরুরি বলে মনে করছেন?

রকিবুল ইসলাম বকুল : এটি বড় ক্যানভাসে আলোচনার বিষয়। শহীদ জিয়ার মধ্যে দেশপ্রেম ও দেশ নিয়ে গভীর চিন্ত-ভাবনা ছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের অনেক আগে থেকেই তিনি সেই স্বপ্ন দেখতেন। যখন তিনি দেখলেন, যারা এদেশের রাজনীতির নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, এই জাতিকে একটি চরম দূঃসময়ের মধ্যে ফেলে রেখে তারা পালিয়ে গেলেন, তখন জিয়াউর রহমান জাতির সামনে এলেন ত্রাণকর্তা হিসেবে। সেই সময় থেকে তিনি তার বুকের মাঝে লালিত স্বপ্ন, আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজে নেমে পড়েছেন। তিনি ভেবেছিলেন, ‘আমরা’ সকলে মিলে এ দেশকে গড়বো। যা পরবর্তী সময়ে সবাই দেখেছে। খাল খনন কর্মসূচি, দেশের উন্নয়নে শিল্প বিপ্লব, কৃষির আধুনিকায়ন, গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে বহুমুখি উদ্যোগ তিনি নিয়েছিলেন। যতগুলো পদক্ষেপ তিনি নিয়েছিলেন, সবগুলোতেই সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছেন। তিনি খুব অল্প সময় পেয়েছিলেন। সেই অল্প সময়েই দেশকে একটি আধুনিক রাষ্ট্রে উন্নীত করার পথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আমাদের দুর্ভাগ্য, তিনি যদি সময় পেতেন তাহলে আজকে আধুনিক রাষ্ট্র বলতে আমরা যা বুঝি সেই সিঙ্গাপুর, মালয়শিয়ার চেয়ে কোনো অংশে আমরা কম থাকতাম না। সকলে মিলে যে কাজ করা যায়, সেটা তিনি বুঝিয়েছিলেন। কখনোই তিনি আমিত্ব  জাহির করেননি। সবকিছুই তিনি ‘আমরা’ দিয়ে করেছেন। আমরাই পারি, আমরাই করবো। এখনো বিএনপি সে আদর্শ বিশ্বাস করে। বেগম জিয়া ও তারেক রহমান এই ‘আমরা’ শব্দটি নিয়েই এগিয়ে চলছেন।

বাংলা আউটলুক : জিয়াউর রহমানের সবাইকে নিয়ে চলার যে রাজনীতি সেই রাজনীর পথে কি বিএনপি হাঁটছে? গত প্রায় ১৮ বছর ধরে বিএনপি আন্দোলন চালিয়ে আসছে, কিন্তু হোঁচট খাচ্ছে, এক্ষেত্রে আপনারা কি কোনো দুর্বলতা খুঁজে পেয়েছেন?

রকিবুল ইসলাম বকুল : শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যে আদর্শের রাজনীতি দিয়ে গেছেন, সেটি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। এই ধারণাটির মূল হলো- দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, মানুষের কথা বলার অধিকার, ভোটের অধিকার জনগণের কাছে থাকবে। জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। সেই জনগণকে নিয়েই তিনি কাজ করতে চেয়েছেন, এভাবেই বিএনপি চলে আসছে শুরু থেকে। তিনি নিজস্ব স্বকীয়তা দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় এই দেশকে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশের একটি অবস্থান সৃষ্টি করেছিলেন। নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। দিন দিন তাঁর সক্ষমতা বাড়ছিল, এটি আধিপাত্যবাদী শক্তি মেনে নিতে পারেনি। যার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপিকে বার বার হোঁচট খেতে হয়েছে। বিএনপির অগ্রযাত্রকে তারা বার বার বাধাগ্রস্ত করেছে। তারা দেখেছে শহীদ জিয়ার স্বপ্ন ও আদর্শ  যদি বাস্তবায়ন হয়ে যায়, তাহলে এই দেশ কারো দারস্থ থাকবে না। মাথা নত করে থাকবে না। নিজেরাই বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হবে। এটা কখনোই ওই আধিপত্যবাদী শক্তি হতে দিতে চায়নি। বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাদের এই অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করেছে। আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপোষহীন নেতৃত্বে সংগ্রাম করে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। আবার আমরা গণতান্ত্রিকভাবে এগিয়ে চলার চেষ্টা করেছি। আবারো আমাদের ওপর আঘাত এসেছে। এক-এগারোতে আমাদের দলের ওপর আঘাত হানা হয়েছে। নির্যাতন হয়েছে আমাদের দলের নেতাকর্মীদের ওপর। ষড়যন্ত্র করে দলটাই নিয়ে যাওয়ার চেষ্ট হয়েছে। কিন্তু জনগণ সবসময়ই বিএনপিকে সমর্থন দিয়ে এসেছে, ভালবেসেছে। এ কারণে কোনো ষড়যন্ত্রই কাজে আসেনি। সেই মঈন উদ্দিন, ফখরুদ্দিন বা তাদের দোসররা দলের ভেতর ফাটল ধরাবার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পারেনি। বিএনপি মানুষের ভালোবাসায় উঠে দাঁড়িয়েছে।

বাংলা আউটলুক : সেই ধকল কি পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পেরেছে বিএনপি?

রকিবুল ইসলাম বকুল :  সেই কালো থাবা এখনো সক্রিয়। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেফতার করে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সুস্থ অবস্থায় তাঁকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হলো কিন্তু যখন ফেরত আনা হলো তখন মুমূর্ষু অবস্থায় পিজি হাসপাতালে ভর্তি করে রাখা হলো। এই দৃশ্য জাতি দেখেছে। আল্লাহর রহমতে তিনি সে যাত্রায় বেঁচে গেছেন। জনগণ স্বপ্ন দেখে শহীদ জিয়ার উত্তরসুরি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উত্তরসুরি হিসেবে দেশনায়ক তারেক রহমান আবারো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে, শহীদ জিয়ার স্বপ্ন- আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাবেন। জনগণও তাঁকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। তিনি ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছেন, ‘আমরাই’  পারবো। অতীতে পেরেছি, এবারও পারবো। আবারো এ দেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করতে, আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণ করতে ‘আমরাই’ পারবো।

বাংলা আউটলুক : আপনার বক্তব্য অনুযায়ী শাসক দল নানান অপকৌশল করছে, কীভাবে আপনারা এগুচ্ছেন?

রকিবুল ইসলাম বকুল : জনগণের যে আস্থা ১৯৭১ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এরপর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ওপর যে ভরসা মানুষ পেয়েছে, সেই ধারবাহিকতা এখনোও চলছে। ’৭১ সালের পর বিএনপি ছাড়াও তিনটি দল- আওয়ামী লীগ, বাকশাল ও জাতীয় পার্টি দেশ শাসন করেছে। মানুষ দেখেছে এরা বাঁকা পথে এসে মানুষের অধিকার হরণ করেছে। মানুষের সম্পদ লুটপাট করে নিয়ে গেছে। দেশকে অন্যের হাতে, অপশক্তির হাতে তুলে দিতে চেয়েছে। এটা জনগণের কাছে পরীক্ষিত। যেই কারণে এই দুঃসময়ের মধ্যেও, এত জুলুম-নির্যাতনের পরও কিন্তু মানুষ এই দল ছেড়ে যায়নি। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি অসহনীয় পর্যায়ে, মানুষ খেতে পারছে না, নিরব একটা দুর্ভিক্ষ চলছে। তারপরও মানুষ বিএনপিকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। যার সর্বশেষ উদাহরণ ৭ জানুয়ারি মানুষ বিএনপির আহ্বানে ভোট দিতে যায়নি। সরকারের এত টাকা-পয়সা, সুযোগ-সুবিধা এত কিছুর পরও তিন পার্সেন্টের বেশি লোককে তারা ভোটকেন্দ্রে নিতে পারেনি। এই তিন পার্সেন্টও বলছে যে, ভোট সুষ্ঠু হয়নি। তার মানে সাতানব্বই শতাংশ জনগণ বিএনপির প্রতি আস্থাশীল। তারা চিন্তা করেছে আজ বিএনপি পারেনি, কিন্তু একদিন বিএনপি পারবে। এই আস্থা বিশ্বাস বিএনপির প্রতি জনগণের আছে। এটাই বিএনপির মূল শক্তি।

বাংলা আউটলুক : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে ভিন্নভাবে উপস্থাপনের ষড়যন্ত্র হয়েছে, নানাভাবে হেয় করার চেষ্টা হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বিএনপি কী উদ্যোগ নিয়েছে?

রকিবুল ইসলাম বকুল : এক-এগারোর সময় থেকেই বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে ছোট করা বা হেয় করা কিংবা তাকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র নিয়ে তারা মাঠে নেমেছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল, তারেক রহমানই পারবেন এদেশের মানুষকে মুক্ত করতে। যেভাবে তাঁর পিতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ’৭১ সালে এ দেশকে মুক্ত করেছিলেন। সে পথে তিনিও এগোবেন। এটা বুঝতে পারার কারণে তার ওপর এই আঘাতটা চলে এসেছে। সেই সময় আমাদের দল বা জনগণ প্রস্তুত ছিল না। দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু লোকজনের সহযোগিতায় এ কাজটি করার সুযোগ পেয়েছিল তারা। কিন্তু আল্লাহর রহমতে তিনি সে যাত্রায় বেঁচে গেছেন। মানুষও বুঝতে পেরেছে। এ কারণেই মানুষ এখন সুসংগঠিত। আমাদের নেতা-কর্মীরাও কিন্তু সংঘবদ্ধ। এ ধরনের আর কোনো ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই। কারণ জনগণই এসবের প্রতিরোধের জন্য যথেষ্ঠ। এদেশের জনগণই দেখেছে, এক-এগারোর পর কতশত অপপ্রচার তার বিরুদ্ধে করা হয়েছে। একটাও কেউ প্রমাণ করতে পারেনি। বর্তমান সরকারও এতবছরে কিছু প্রমাণ করতে পারেনি। দেশী-বিদেশী চক্রান্তের অংশ হিসেবেই এটি করা হয়েছিল। কারণ ষড়যন্ত্রকারীরা জানে, শহীদ জিয়ার যোগ্য উত্তরসুরি হিসেবে আগামী দিনে শুধু বাংলাদেশে নয়, এই দক্ষিণ এশিয়ায় নেতৃত্ব দেবেন তারেক রহমান। বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষমতা তার আছে। এখনো পর্যন্ত ওই শক্তি সে কারণেই ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।

বাংলা আউটলুক : এই ষড়যন্ত্র ভেদ করে মানুষর স্বপ্ন কি বিএনপি পূরণ করতে পারবে?

রকিবুল ইসলাম বকুল : দেশনায়ক তারেক রহমানকে কথা বলতে দেওয়া হয় না। আদালতে রায় এনে তার বক্তব্য প্রকাশ বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু তারা তার কথা বন্ধ করতে পারেনি। দেশের মানুষের হৃদয়ে তার বক্তব্য পৌঁছে গেছে। এরপর তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে তার বক্তব্য মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে। সেটাতেও তারা ব্যর্থ হয়েছে। এর কারণ তারেক রহমান মানুষের হৃদয়ে ঢুকে গেছেন। এই ষড়যন্ত্র শুধু দেশী চক্রান্তকারীরা নয়, বিদেশী একটি শক্তিও করছে। যাতে বাংলাদেশে আগামী দিনে কোনো নেতৃত্ব গড়ে উঠতে না পারে। যে ধরনের নেতা বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে, সেই ধরনের নেতৃত্ব যাতে উঠতে না পারে সেটাই ছিল তাদের লক্ষ্য। কিন্তু তারা পারেনি। শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বে তিনি প্রমাণ করতে পেরেছেন, তিনিই পারবেন এই জনগণকে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের হাত থেকে রক্ষা করতে। এটাই আমাদের সার্থকতা।

বাংলা আউটলুক : দীর্ঘ এই আন্দোলনের পর কি দলের নেতৃত্বে কিছুটা রদবদল প্রয়োজন বলে মনে করছেন?

রকিবুল ইসলাম বকুল : এটি একটি রাজনৈতিক দলের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু অনেক সময় আমরা হয়তো সঠিক নেতৃত্ব আনতে পারি না। কারণ, সঠিক নেতৃত্ব বাছাইয়ের যে পরিবেশ লাগে সেই স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিবেশ দেশে বিরাজ করছে না। সেই স্পেসটা আমরা পাচ্ছি না। একটার পর একটা নির্যাতন-নিপীড়ন চলছেই। সে জন্য পর্যাপ্ত সময়-সুযোগ অনেক সময় আমরা পাই না। সে জন্য অনেক সময় হয়তো আমাদের নেতৃত্ব বাছাই করতে বিলম্ব হয়। কিংবা সমস্যা তৈরি হয়। কিন্তু বর্তমানে যে নেতৃত্ব রয়েছে, সেই নেতৃত্ব দিয়েই বিগত আন্দোলন করেছি এবং সফলতার সাথেই কাজ করেছি। আমাদের নেতা-কর্মীদেরকে আমরা ধরে রেখেছি। তারাও সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমেই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে তাদের রায় দিয়েছে।

বাংলা আউটলুক : ছাত্র ও শ্রমিক শ্রেণীকে আন্দোলনে সংযুক্ত করতে কী কী উদ্যোগ আছে?

রকিবুল ইসলাম বকুল : বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্র-শ্রমিকরা কিন্তু যথেষ্ট ভাল ভূমিকা রেখেছে। যদিও কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নেই। ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর কোনো সহাবস্থানও নেই। শুধু ছাত্রলীগ এক তরফাভাবে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করেছে। সুস্থ পরিবেশ নেই। তারপরও ছাত্ররা এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলছে। বড় বড় মিল-ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেছে। সেই কারণে শ্রমিক সংগঠনগুলো দুর্বল হয়ে গেছে। ট্রেড ইউনিয়নগুলোও দুর্বল হয়ে গেছে। কিন্তু সম্প্রতি আমরা দেখেছি, গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকরা তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলছে। তারা এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জীবন দিয়েছে। সুতরাং তাদের এই ভূমিকাও আমাদের আশাবাদী করে। নিশ্চয়ই স্বৈরাচারের অবসান হবেই। দলগতভাবেও আমাদের নানা উদ্যোগ আছে- আমাদের শ্রমিক দল, ছাত্রদলকে আরো শক্তিশালী করে দ্রুত সময়ের মধ্যেই বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে।

বাংলা আউটলুক : শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের কর্পোরেট চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়ে দেশপ্রেম থেকে দূরে ঠেলে দেয়া হচ্ছে কি?

রকিবুল ইসলাম বকুল : আমি এই বক্তব্যের সাথে পুরোপুরি একমত নই। তারপরও বলবো, কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী এদেশের মেধাবীদের অবদমিত করে রাখার ষড়যন্ত্র করছে বা বাইরে রাখার চেষ্টা করছে। তাদের নিজস্ব লোকদের বসিয়ে এই কায়েমী স্বার্থান্বেষী মহল লুটপাট করছে। এ দেশটাকে ধ্বংস করছে। কিন্তু ছাত্ররা দেশপ্রেমিক না হলে কীভাবে কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে তাদের দাবি আদায় করেছে? নিরাপদ সড়কের দাবি তারা আদায় করেছে। কিন্তু এই ফ্যাসিস্ট সরকার এটা করতে দিতে চায় না। কারণ, এই শক্তিগুলো একত্রিত হলে, কখন তার গদি উল্টে যায়, সেই ভয় আছে। কায়েমী আধিপত্যবাদী গোষ্ঠীর স্বার্থ নষ্ট হয়ে যাবে তাতে। যদি একটি গণতান্ত্রিক শক্তি এদেশে চলে আসে- এই ভয়ে তারা আতঙ্কিত। এজন্যই তারা প্রতিটি মানুষকে ব্যক্তিগতভাবে টার্গেট করে, তাদের সন্তানকে রাজনীতি থেকে নিবৃত করছে। তাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন বন্ধ করে রাখছে। তাদের কথা না শুনলে খুন করা হচ্ছে, গুম করা হচ্ছে। কিংবা অপবাদ দিয়ে জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই যে একটা ভয়ের রাজত্ব কায়েম করেছে, এজন্য জনগণ তাদের সন্তানকে রাজনীতি থেকে নিবৃত করার চেষ্টা করছেন কখনো কখনো। এই সংস্কৃতি থাকবে না- সেটা জনগণ বুঝতে পেরেছে। জনগণ জেগে উঠেছে। আর, জনগণের পক্ষের শক্তির  নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশ নায়ক তারেক রহমান। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতিচ্ছবি জনগণ তার ভেতরে দেখছেন। তারা আশাবাদী অতীতের মতো আবারো একটি বিপ্লবের মাধ্যমে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটবে। ইনশাআল্লাহ্।

বাংলা আউটলুক : আপনি কতটুকু আশাবাদী?

রকিবুল ইসলাম বকুল : আমি পুরো মাত্রায় আশাবাদী। কারণ গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী প্রেক্ষাপটে, পুরো জাতিই এখন তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। গণতান্ত্রিক আন্দোলন যারা করেছে, রাজনীতি এখন তাদের হাতে। রাজনীতি এখন তারেক রহমানের হাতে। অপর পক্ষে আছে একটি ফ্যাসিস্ট সরকার। তারা রষ্ট্রীয় শক্তির ওপর ভর করে টিকে আছে। জনগণ তাদের পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে। জনগণ  প্রত্যাখ্যান করলে সেই সরকার আর ক্ষমতায় থাকতে পারে না। অতীতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। এটা সাময়িক একটা ব্যপার। এই ডামি সরকারের লোকজনই বিশ্বাস করে, তারা নড়বড়ে অবস্থায় আছে। কখন যে তারা নাই হয়ে হয়ে যাবে, সেই চিন্তা তারাও করছে। আমরা আমাদের রাজনীতির একদম শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। জনগণ আমাদের রায় দিয়েছে, এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।

বাংলা আউটলুক : আপনাকে ধন্যবাদ।

রকিবুল ইসলাম বকুল : বাংলা আউটলুককেও ধন্যবাদ।  

 

 

অনুসরণ করুন