Logo
Logo
×

সাক্ষাৎকার

সমগ্র পৃথিবী জেনে গেছে ভারতের কারণে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছে: অলি আহমেদ

Icon

ঢাকা অফিস

প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২৪ পিএম

সমগ্র পৃথিবী জেনে গেছে ভারতের কারণে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছে: অলি আহমেদ

ফাইল ছবি

ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বীক্রম। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান তিনি। জিয়াউর রহমান যখন বিএনপি গঠন করেন তখন কর্নেল অলির আরও ৯ বছর চাকরি ছিল। তবে সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে তিনি যোগাযোগ মন্ত্রী হন। যমুনা সেতুর কাজ তার সময়েই শুরু হয়। বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘ রাজনৈতিক পথচলা শেষে ২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবর সাবেক রাষ্ট্রপতি এ.কিউ.এম. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি গঠন করেন। পরে এ.কিউ.এম. বদরুদ্দোজা চৌধুরী এলডিপি থেকে বেরিয়ে বিকল্প ধারা বাংলাদেশ নামে নতুন দল করেন।

সম্প্রতি কর্নেল অলি আহমেদ দেশের রাজনীতি, চলমান আন্দোলন-সংগ্রাম. ভারতীয় পণ্য বর্জন, পরবর্তী করণীয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন বাংলা আউটলুকের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা আউটলুকের ঢাকা প্রতিনিধি।

বাংলা আউটলুক: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলন চলছে। বিএনপি সেই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছে। সরকারবিরোধী একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) কি ভাবছে?

অলি আহমেদ: রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো মনে করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে নগ্নভাবে সমর্থন করেছে ভারত সরকার। ভারতের জনগণ এর সঙ্গে জড়িত নয়। ভারত সরকার বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে। সুতরাং, এই অবস্থায় যারা বিরোধী দলে আছে তারা মনে করে ভারতের পণ্য বর্জন করতে হবে। এই সিদ্ধান্ত কেউ এককভাবে নেয়নি, সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঘরে মা-মেয়েদের যে শাড়ি আছে তা পোড়াবেন কি-না? আমরা কার ঘরে কী আছে সেটা জ্বালাতে বলিনি। আমরা এখন থেকে বর্জন করতে বলেছি। আগে থেকে যার ঘরে যা আছে তা নিয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। আমরা যখন ডাক দিয়েছি তখন থেকে ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা বলেছি। তবে পরিষ্কার করে বলতে চাই, ভারতের জনগণের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। ভারতের উচিত ছিল বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা; কোনো বিশেষ গোষ্ঠী কিংবা দালালের সঙ্গে নয়।

বাংলা আউটলুক: বিগত তিনটি নির্বাচনে ভারত বাংলাদেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আপনি কী মনে করেন।

অলি আহমেদ: আমরা তো বলেছি বিগত তিনটি নির্বাচনে ভারত নগ্নভাবে হামলা করেছে। সুজাতা সিং এসেছে। আরও অনেকে এসেছে। এগুলো পত্র-পত্রিকায় এসেছে। তাদের কারণে দেশের ১৮ কোটি মানুষ অসহায় জীবন-যাপন করছে। ভারতের এই নগ্ন হস্তক্ষেপের কারণে দেশের মানুষ অত্যন্ত কষ্টে জীবনযাপন করছে। দেশের জনগণ চায় তারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকুক। দেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলুক।

বাংলা আউটলুক: শুধু ভারতীয় পণ্য বর্জন নয়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এক ধাপ এগিয়ে দেশের জনগণকে ভারতে না যেতে আহ্বান জানিয়েছেন। এ বিষয়ে আপনি কী বলেন।

অলি আহমেদ: ভারতে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে আমাদের কোনো আহ্বান নেই। আমাদের আহ্বান শুধু ভারতের পণ্য বর্জনের জন্য। আর দেশে অবৈধভাবে ভারতীয় যারা আছে তাদেরকে নিজ দেশে ফিরে যাবার জন্য দাবি জানাচ্ছি।

বাংলা আউটলুক: আপনি বিএনপির অস্থায়ী মহাসচিব হচ্ছেন বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন রয়েছে। আসলে বিষয়টির কোনো ভিত্তি আছে কি?

অলি আহমেদ: রাজনৈতিক অঙ্গনের এমন গুঞ্জন আমিও শুনেছি। তবে বিএনপির দায়িত্বশীল কেউ আমার সঙ্গে এ নিয়ে কোনো আলাপ করেননি। কিংবা কেউ আমাকে প্রস্তাব দেননি। ১৯৮৪ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আমাকে বিএনপির মহাসচিব বানানোর জন্য ওনার এক আত্মীয় এম আর চৌধুরীর বাসায় আমাকে সারা দিন বসিয়ে রেখেছিলেন। তখন আমি বলেছিলাম আমি কাজ করব, কিন্তু মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের মতো আমি স্বচ্ছল নই। বিএনপি মহাসচিব হলে পকেটে ৬০-৭০ হাজার টাকা রাখতে হবে, নেতাকর্মীদের দেখতে হবে। দ্বিতীয়বার ১৯৮৯ সালে আমাদের দলের মহাসচিব করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি একই অজুহাতে মহাসচিব পদে দায়িত্ব পালন করতে অনীহা প্রকাশ করেছি। আর এখন আমি বিএনপি মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য ফিট নই। কারণ আমার বয়স হয়েছে।

বাংলা আউটলুক: আপনারা বলেছিলেন নির্বাচন হয়ে গেলেও আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। কিন্তু আন্দোলন তো দেখা যাচ্ছে না।

অলি আহমেদ: রমজানের কারণে আন্দোলন বন্ধ আছে। রমজানে আমরা জনগণকে কষ্ট দিতে চাই না। দেশের জনগণ গত ১৫-১৬ বছর ধরে বহু কষ্টে রয়েছে। তাই নতুন করে রমজান মাসে কষ্ট দিতে চাই না। জনগণ যে অসহনীয় কষ্টে আছে তা থেকে রেহাই পেতে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করুক। এটাও এক ধরনের কর্মসূচি।

বাংলা আউটলুক: ভারতের মনোভাবের কারণে প্রতিবেশী মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটানসহ অনেকে চীনের দিকে ঝুঁকছে। আপনারা রাজনৈতিকভাবে ভারতের প্রভাব কমাতে কিংবা মোকাবিলায় চীনের দিকে ঝুঁকবেন কি-না?

অলি আহমেদ: ভারতের ভুল পলিসির কারণে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, নেপাল সবাই চায়নার সঙ্গে মিলে একসঙ্গে কাজ করছে। বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশকে চায়না শতকরা ৭৫ ভাগ গ্রাস করে রেখেছে। আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। আমরা যোগাযোগের চেষ্টা করছি না। আমরা চাই প্রতিবেশী ভারত সঠিক পথে চলে আসুক। বাংলাদেশের জনগণের মনের কথা বুঝুক। বাংলাদেশে তারা যে সমস্যা সৃষ্টি করেছে তার সমাধান করা তাদেরই উচিত। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তাদেরই চেষ্টা করা উচিত।

বাংলা আউটলুক: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অন্য মন্ত্রীদের কেউ কেউ বলছেন তাদেরকে ক্ষমতায় রাখার জন্য পাশে ছিল ভারত।

অলি আহমেদ: ওবায়দুল কাদের তো সরাসরি বলেছেন, ভারতের সহায়তায় তারা ক্ষমতায় রয়েছেন। সুজাতা সিং ঢাকায় এসে বলেছিলেন কেউ নির্বাচন করুক না করুক নির্বাচন হবে। ভারতের পক্ষ থেকে স্বীকার করেছে তারা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে। আওয়ামী লীগ স্বীকার করেছে ভারত তাদেরকে সাহায্য করেছে। এতে আর কোনো সন্দেহ থাকার সুযোগ নেই। পুরো বাংলাদেশ জেনে গেছে, সমগ্র পৃথিবী জেনে গেছে ভারতের কারণে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস। এখানে ভারত ও বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে, তারা সাক্ষ্য দিয়েছেন। এখন ভারতকে সঠিক অবস্থানে নিয়ে আসতে হবে বাংলাদেশকে। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে ভারতকে ব্যবস্থা করতে হবে।

বাংলা আউটলুক: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে ভারত সরকারের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো স্টেটমেন্ট আশা করেন কি-না?

অলি আহমেদ: ভারত জড়িত ছিল বলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোনো স্টেটমেন্ট দেয়নি। কারণ নির্বাচনে ভারত জড়িত ছিল। নির্বাচনের আগে ভারতের একাধিক সরকারি কর্মকর্তা দেশে এসে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে গেছে। ভারতকে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক করতে হবে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে ভারতকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

অনুসরণ করুন