Logo
Logo
×

সারাদেশ

উত্তরাঞ্চলে কমছে গম, বাড়ছে ভুট্টার আবাদ

Icon

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:২৯ পিএম

উত্তরাঞ্চলে কমছে গম, বাড়ছে ভুট্টার আবাদ

রংপুর বিভাগের আটটি জেলাতেই গমের চাষ হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গম উৎপাদন হয় ঠাকুরগাঁওয়ে। যে কারণে এ জেলাকে বলা হয় বাংলার রুটির ঝুঁড়ি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে গমের জায়গা দখল করে নিচ্ছে ভুট্টা।

প্রান্তিক কৃষকরা বলছেন, চাষাবাদের খরচে গম ও ভুট্টা প্রায় সমান হলেও ফলনে এগিয়ে ভুট্টা। যে কারণে দিন দিন গমের পরিবর্তে ভুট্টা চাষের দিকে ঝুঁকছেন তারা। তবে সার-বীজ ও কীটনাশকের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির ফলে অতিরিক্ত ফসলের ‍সুবিধা তারা ঘরে তুলতে পারছেন না।

 

বিষয়টি স্বীকার করে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, প্রতি বছরই গমের জমিগুলোতে ভুট্টার আবাদ হচ্ছে। বাজার যাচাই করে কৃষকরা নিজেরাই ঝুঁকছেন এতে। স্থানীয় কৃষি অফিসগুলো তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা করছে।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের মাঠে মাঠে গম ও ভুট্টা পাশাপাশি চাষ হচ্ছে। বয়সের ভেদে গাছের উচ্চতায় তারতম্য থাকলেও অনেক মাঠেই প্রায় সবুজ ডাঁটা যুক্ত এ ফসল অপরূপ শোভা ছড়াচ্ছে।

একই অবস্থা দেখা গেছে, পাশ্ববর্তী জেলা ঠাকুরগাঁওয়েও। সদর উপজেলাসহ জেলার ৫টি উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গম ও ভুট্টার বাম্পার ফলন এসেছে এবার।

 

বৃষ্টি ও বাতাসে আধাপাকা গমের কিছুটা ক্ষতি হলেও তাতে ভুট্টার উপকার হবে বলে জানিয়েছে, স্থানীয় কৃষি অফিস। আর কৃষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আবহাওয়ায় তারতম্য হচ্ছে। সিজনের আগেই বৃষ্টি-ঝড়ো বাতাস হচ্ছে। এতে গমের ক্ষতি হচ্ছে। তবে ভুট্টা গাছ অপেক্ষাকৃত শক্ত হওয়ায় সেগুলোর তেমন ক্ষতি হচ্ছে না। যার ফলে ভুট্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

 

জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে মাঠের পর মাঠ ভুট্টার ক্ষেত। স্থানীয় চন্দনচহাট গ্রামের চাষী একলাস উদ্দিন জানান, তিনি আগে ৫ বিঘা জমিতে গম চাষ করলেও এখন ৩ বিঘাতে ভুট্টার চাষ করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ভুট্টার বাজার দর বেড়ে যাওয়ায় তার মতো অনেকেই ভুট্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন বলে জানান একলাস।

 

তার কথার সত্যতা মিললো বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কৃষক মুজিবলের কথায়। তিনি জানান, বিঘাপ্রতি গমের ফলন ২০ মন হলে সেখানে ভুট্টা ফলে প্রায় ৫০ মন। দামের দিক থেকে এখন গম ও ভুট্টার খুব বেশি তফাৎ নেই। তাই লাভ ভুট্টাতেই বেশি।

 

তিনি বলেন, দেড় বিঘা জমিতে অন্তত ৬০ থেকে ৬৫ মন ভুট্টা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সার-বীজ ও শ্রমিকের দাম বেড়ে যাওয়ায় সব হিসাব-নিকাশ করে খুব বেশি লাভ হয় তাও নয়- বলে জানান এই কৃষক।

 

একই ধরনের কথা বললেন, একই উপজেলার করিয়া-কলন্দা গ্রামের কৃষক আবু সাঈদ। বাংলা আউটলুকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বর্তমানে বাজারে সব জিনিশের যে হারে দাম বাড়ছে সে হারে ফসলের দাম বাড়ছে না। আবার সার-বীজ ও কীটনাশক বাকিতে আনায় দোকানদারদের অতিরিক্ত দাম দিতে হয়। পাশাপাশি শ্রমিকের দাম বেড়েছে। সবকিছু মিলিয়ে কৃষিতে এখন আর লাভ নেই। কোনোমতে পরিবার-পরিজন নিয়ে দিন পার করতে হচ্ছে।

 

আবু সাঈদ জানান, তাদের ৯ সদস্যের সংসারে তিন জনই কৃষি কাজের সঙ্গে নিয়োজিত। তাতেও সংসার ঠিকঠাক চলছে না। বিশেষ করে রমজানে জিনিশপত্রের যে দাম তাতে ভালোমন্দ খাওয়ার কোনো অবস্থা নাই।

 

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‍উপপরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বাংলা আউটলুককে জানান, পুরো উত্তরাঞ্চলের মতোই তার জেলায় ভুট্টার আবাদ দ্রুত বাড়ছে। আগে যে সব জমিতে গমের আবাদ হতো সেসব যায়গায় কৃষকরা ভুট্টার চাষ করছেন। তার জেলায় এ বছর প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হচ্ছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

অনুসরণ করুন