দাম কমলেও বাড়েনি ক্রেতা, তরমুজ বিক্রেতারা হতাশ

দাম কমলেও বাড়েনি ক্রেতা, তরমুজ বিক্রেতারা হতাশ

দাম কমলেও বাড়েনি ক্রেতা, তরমুজ বিক্রেতারা হতাশ। বাংলা আউটলুক।

বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টা থেকে ভ্যানে ১০০ তরমুজ নিয়ে খিলগাঁও তিলপাপাড়া সড়কের পাশে বসেছেন মো. রনি মিয়া। রাত ১০ টা ৪০ মিনিটের সময় যখন এই প্রতিবেদকের সঙ্গে তার কথা হয় তখন তরমুজ বিক্রি হয়েছে মাত্র ৩০টি। অথচ, প্রত্যাশা ছিল প্রায় সব তরমুজই বিক্রি হবে একদিনে। কিন্তু তা হয়নি। বেচাবিক্রির যে অবস্থা তাতে তরমুজগুলো বিক্রি হতে শনিবার পার হয়ে যাবে বলে ধারণা রনি মিয়ার।

বাংলা আউটলুকের সঙ্গে আলাপচারিতায় রনি জানান, তরমুজের দাম কমেছে অনেক, কিন্তু সেই তুলনায় ক্রেতা বাড়েনি। তরমুজ নিয়ে রমজানের শুরুর দিকে যে তেলেসমাতি ছিল, তাতে ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বলে তিনি মনে করেন।

রনি ১০০ তরমুজ বাদামতলীর আড়ৎ থেকে কিনেছেন ২৩ হাজার টাকায়। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পরিবহন ও শ্রমিক খরচ। প্রতিটি তরমুজের গড় ওজন ৭ থেকে ৮ কেজি। দাম ২৫০ থেকে ৩০০-এর বেশি নয়। তারপরও ক্রেতাদের চাহিদা নেই। 

গোড়ান সিপাহীবাগ বাজার থেকে খিলগাঁও শাহজাহানপুর মোড় পর্যন্ত যেতে রনির মতো অন্তত ২০০ দোকানি তরমুজ নিয়ে বসেছেন। তাদের কেউ স্থায়ী দোকানি আবার কেউ ভাসমান। রাস্তার মোড়ে, বাড়ির সামনে কিংবা ফলের দোকানের এসব তরমুজ দেখলে যে কারো জিভে জল এসে যাবার কথা। কিন্তু পরিস্থিতি তার উল্টো। এই রমজানে মানুষের প্রয়োজন থাকলেও সেভাবে দোকানের কাছে ভিড়ছেন না তারা। 

তরমুজের বিক্রি কমার পেছনে সিন্ডিকেটের প্রতি মানুষের ক্ষোভ তো রয়েছেই, এর সঙ্গে অর্থনৈতিক দূরাবস্থার বিষয়টিও যোগ হয়েছে বলে মনে করছেন আরেক দোকানি রিংকু। আগের তরমুজের সঙ্গে বৃহস্পতিবার নতুন করে আরো ৩০০ তরমুজ দোকানে তুলেছেন এই ব্যবসায়ী। কিন্তু বিক্রি নেই। তাই হতাশা তার চোখে-মুখে। 

রিংকু জানান, এবারের রমজানে আবহাওয়া ঠাণ্ডা। সারা দিন খুব বেশি রোদ নেই। রোজা রাখলেও মানুষের মধ্যে তেমন ক্লান্তি ভর করে না। যে কারণে ইফতারে তরমুজ সেভাবে চলছে না। এছাড়া মাসের শেষ দিকে মানুষের পকেটে পয়সাও নেই। টানাটানির মধ্যে মানুষ ঈদের কেনাকাটার দিকে বেশি মনযোগী হওয়ায়ও এসব পণ্যের প্রতি মানুষের আগ্রহ কম বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী। 

এদিকে, সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, তরমুজের দাম কমলেও মানুষের মধ্যে তরমুজ নিয়ে ক্ষোভ ও অনীহা সৃষ্টি হয়েছে সেটি কমেনি। আলাউদ্দীন নামের একজন ক্রেতা বলেন, সিজনের শুরুতে যে কোনো দেশি ফলের প্রতি মানুষের আলাদা আগ্রহ থাকে। এবছর রমজানেও তরমুজের প্রতি মানুষের তেমন আগ্রহ ছিল। কিন্তু সিন্ডিকেটের অতি লোভ মানুষের সেই আগ্রহকে পুঁজি করতে চেয়েছিল। এখন ঘটনা তার উল্টো ঘটেছে। 

তার মতে, স্বাভাবিক বাজার থাকলে মানুষও তরমুজ খেত। আবার ব্যবসায়ীরাও ব্যবসা করতে পারতো। এতে কৃষক বাঁচতো। এখন যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে সাধারণ মানুষ তরমুজ না কিনলে আগামীতে অনেকেই তরমুজ চাষ ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে। তার মতে, সাধারণ মানুষের কাছে তরমুজ আগ্রহ হারিয়েছে। 

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তরমুজের অত্যাধিক দামের কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ মানুষ যে বর্জন কর্মসূচী নিয়েছে তা অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য মানুষের কাছে এর বিকল্পও নেই বলে মনে করছেন তারা। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি তরমুজ উৎপাদন হয় পটুয়াখালী জেলায়। লাখ লাখ পিস তরমুজ সদরঘাটের বাদামতলী আড়তে আসছে। সেখান থেকেই মূলত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এসব তরমুজ নিয়ে যান খুচরা বিক্রেতারা। 

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, আড়তে এখন আর সেই আগের পরিবেশ নেই। তরমুজের দাম কমার পাশাপাশি কমেছে ফড়িয়াদের ভাব-চক্করও। তারা এখন কোনোমতে বিক্রি করতে পারলেই যেন বাঁচে। তাই সেখানে খুচরা ক্রেতাদের কদরও নাকি বেড়েছে বলে মোখলেস নামের এক বিক্রেতা জানান। 

জমি-ফ্ল্যাটের হন্তান্তর ফি ২০০% পর্যন্ত বাড়ছে পরবর্তী

জমি-ফ্ল্যাটের হন্তান্তর ফি ২০০% পর্যন্ত বাড়ছে

কমেন্ট

6090 Dawson Blvd, Suite H, Norcross, GA, United States, Georgia [email protected]