‘অপ্রয়োজনীয়’ ৩ বিদ্যুৎকেন্দ্র, হাজার কোটি টাকা গচ্চার শঙ্কা

‘অপ্রয়োজনীয়’ ৩ বিদ্যুৎকেন্দ্র, হাজার কোটি টাকা গচ্চার শঙ্কা

ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনে বর্জ্য ও ময়লা থেকে ৬ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি জামালপুর ও চট্রগ্রামে দেশের সবচেয়ে বড় ৩০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন দুইটি সৌরবিদুৎ কেন্দ্র হতে যাচ্ছে। বিওও (বিল্ড ওন অপারেট) পদ্বতিতে আইপিপি (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট) আওতায় এই বজ্র থেকে বিদ্যুৎ ও সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।

যদিও দেশের বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে আর নতুন কোনো বিদ্যুৎ কেন্দ্র দরকার নেই। বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা আছে ২৫ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। কিন্তু প্রয়োজন পড়ে মাত্র ১৪ হাজার থেকে ১৭ হাজার মেগাওয়াট।

এই তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২০ বছর ধরে সরকারের বিদ্যুৎ কিনতে খরচ হবে ১৮ হাজার ৪১৩.২ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় এ তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের নবায়নযোগ্য জ্বালানি-১ শাখার দেশের আরেকটা সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাবগুলো আগামীকাল বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উপস্থাপিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

বিদ্যুৎ বিভাগের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিওও পদ্বতিতে ডিপি ক্লিন টেক ইউকে লিমিটেড এবং ইমপেক্ট এনার্জি গ্লোবাল লিমিটেড কনসোর্টিয়াম ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের বজ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদেনর ৬ মেগাওয়াটে কেন্দ্রটি স্থাপন করবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, নেগোসিয়েটেড ট্যারিফ অনুসারে বর্ণিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট ভিত্তিতে বিদ্যুৎ কিনলে কোম্পানিকে আনুমানিক ১ হাজার ৯৫১.২০ কোটি টাকা পরিশোধ করবে সরকার। প্রতি ১ ডলার ১১১ টাকা ধরা হয়েছে। কিলোওয়াটপ্রতি দাম ধরা হয়েছে ২৩ দশমিক ২১ টাকা।  

এদিকে, জামালপুর জেলার ইসলামপুরে ৯০২ দশমিক ৩৫ একর জমির ওপর অত্যাধুনিক প্রযুক্তির পরিবেশবান্ধব ৩০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প খুবই শিগগিরই শুরু করা হবে। নেগোসিয়েটেড ট্যারিফ অনুসারে বর্ণিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট ভিত্তিতে ২০ বছরে বিদ্যুৎ কিনলে কোম্পানিকে আনুমানিক ১০ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা পরিশোধ করবে সরকার। প্রতি ১ ডলার ১১১ টাকা ধরা হয়েছে। কিলোওয়াটপ্রতি দাম ধরা হয়েছে ১১ দশমিক ১০ টাকা। বাংলাদেশ ও বিদেশি যৌথ উদ্যোগে সেল-জিটেক পাওয়ার প্লান্টটি নির্মাণ করবে।

অল্প সময়ের মধ্যেই এই সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হবে। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর তা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।

অন্যদিকে, চট্রগ্রাম জেলার বাঁশখালিতে সরল গ্রামে কোম্পানি নিজ খরচে জমি ক্রয় করে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির পরিবেশবান্ধব ১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প খুবই শিগগিরই শুরু করবে। নেগোসিয়েটেড ট্যারিফ অনুসারে বর্ণিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট ভিত্তিতে ২০ বছরে বিদ্যুৎ কিনলে কোম্পানিকে আনুমানিক ৫ হাজার ৬৬৮ দশমিক ৮০ কোটি টাকা পরিশোধ করবে সরকার। প্রতি ১ ডলার ১১১ টাকা ধরা হয়েছে। কিলোওয়াটপ্রতি দাম ধরা হয়েছে  ১৩ দশমিক ৪৮১ টাকা । বাংলাদেশ ও হংকং যৌথ উদ্যোগে প্রাইভেট কনসোর্টিয়াম অব হিউইহেগ উইং পাওয়ার লিমিটেড হংকং এবং জুপিটার ইনার্জি লিমিটেড প্লান্টটি নির্মাণ করবে।

২০২৫ সালের মধ্যে সৌর, জলবিদ্যুৎ ও বায়ুসহ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার পেছনে ছুটছে সরকার।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) মতে, বর্তমানে দেশে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ২ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য এসব থেকে কমপক্ষে ১২ শতাংশ বিদ্যুতের প্রয়োজন।

এর আগে সরকার ২০১৫ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে মোট বিদ্যুতের কমপক্ষে ৫ শতাংশ এবং ২০২০ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এখনও তার কোনোটিই অর্জন হয়নি।

টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) প্রস্তুতকৃত ন্যাশনাল সোলার এনার্জি রোডম্যাপ ২০২১-৪১ অনুসারে, বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন সুবিধা সম্প্রসারণের মাধ্যমে ২০ হাজার মেগাওয়াট গ্রিন ইলেকট্রিসিটি উৎপাদন করতে পারে।

এমনকি নদী তীরবর্তী এবং পরিত্যক্ত জমির যথাযথ ব্যবহার করে সৌরবিদ্যুতের সক্ষমতা ৩০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা যেতে পারে বলে সেখানে বলা হয়েছে।

ক্ষেত থেকে শুরু সিন্ডিকেট: রমজানে আরো অসহায় গ্রামের মানুষ    পরবর্তী

ক্ষেত থেকে শুরু সিন্ডিকেট: রমজানে আরো অসহায় গ্রামের মানুষ   

কমেন্ট

6090 Dawson Blvd, Suite H, Norcross, GA, United States, Georgia [email protected]