মরে যাবো নিশ্চিত হয়ে আমাকে হাসপাতালে ফেলে পুলিশ সরে যায় : সাজিদ হাসান

মরে যাবো নিশ্চিত হয়ে আমাকে হাসপাতালে ফেলে পুলিশ সরে যায় : সাজিদ হাসান

আমার ডান পা থেঁতলে গেছে। উঠে দাঁড়াবার মতো কোনো  শক্তি আমার ছিল না। এরপরও জোর করে আমাকে হাঁটতে বাধ্য করা হলো। দু’জনের কাঁধে ভর করে হাঁটছি। আমার ডান পা ঝুলছে। মাটিতে টানতে টানতে পুলিশ বক্সে নিয়ে গেল। পুলিশের সামনেই আবারো পেটালো। পুলিশও পেটালো। কিছুক্ষণ পর আমি নিস্তেজ হয়ে পড়ে রইলাম মেঝেতে। অস্ফূট স্বরে পানি চাইলাম, কয়েকজন আমার মুখে থু থু দিল। আমার মনে হচ্ছিল ধীরে ধীরে আমি মরে যাচ্ছি। আমি নিথর, প্রায় নিস্তব্ধ। কানে আসছে “স্যার ওর অবস্থা ভাল না। দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। মারা যেতে পারে”। কথাগুলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক সাজিদ হাসান বাবুর।

২০২৩ সালের ২৯ জুলাই, রাজধানী ঢাকার গাবতলীতে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের যৌথ হামলার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কথাগুলো বলেন বাবু।

সাজিদ হাসান বাবুর জন্ম ১৯৮৭ সালের ১২ জুন; জামালপুর জেলার সদর উপজেলায়। আইনজীবী বাবা মৃত রকিবুল হোসেন ও মা নূর-ই-নাজনিন ফেরদৌসীর ৫ পুত্র ১ কন্যা সন্তানের মধ্যে সবার ছোট সাজিদ হাসান। ১৯৯১ সালে বাবার মৃত্যুর পর ভাই-বোন আর মা আত্মীয় স্বজনদের সকলেরই ভীষণ আদরের ছিলেন ছোট্ট বাবু। জামালপুর জিলা স্কুল থেকে ২০০১ সালে মাধ্যমিক ও ২০০৩ সালে জামালপুরের সরকারী আকেশ মাহমুদ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। একাদশ শ্রেণীতে পড়ার সময় ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত হন তিনি। এরপর ২০০৪-০৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। উর্দু সাহিত্যে স্নাতক শেষ করেন ২০১০ সালে। ছিলেন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রদলের নেতাও। বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় ২০১৬ সালে ঢাবি ছাত্রদলের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতির পদ পান ২০১৯ সালে। এখন যুবদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন সাজিদ হাসান বাবু। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতি করতে গিয়ে কারাবরণ করেছেন ২ বার। গ্রেফতার হয়েছেন ৪ বার। বর্তমানে ৫টি রাজনৈতিক মামলা চলমান কয়েছে। আর অসংখ্য বার পুলিশ-আওয়ামী লীগের হামলার শিকার হয়েছেন সাজিদ হাসান বাবু।

সাজিদ হাসান বাবু বাংলা আউটলুকের সঙ্গে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া নানা হামলা-নির্যাতনের কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বাংলা আউটলুকের ঢাকা প্রতিনিধি।

বাংলা আউটলুক : বাবা-মা, ভাই-বোনদের সবচেয়ে আদর স্নেহ আর কড়াকড়ির ভেতরে বেড়ে উঠে রাজনীতিতে জড়ালেন কীভাবে?

সাজিদ হাসান : কলেজে প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার পর দেখলাম- কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। আমিও ছাত্র সংসদ নির্বাচন করার চিন্তা করলাম। ছাত্রদলের মিছিল মিটিং-এ নিয়মিত যাতায়াত শুরু করলাম। এক সময়, অস্থিতে-মজ্জায় ঢুকে গেল ছাত্রদল। সেই শুরু। পরিবার কখনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। বরং সহযোগিতা পেয়েছি বেশি। এই করতে করতে এইচএসসি পাস করে ফেললাম। কিন্তু কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আর হলো না। আমিও চলে এলাম ঢাকায়। ভর্তি হলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বাংলা আউটলুক : ঢাবি’তে ছাত্র রাজনীতির শুরুটা কেমন ছিল?

সাজিদ হাসান : শুরুটা বেশ ভালই ছিল। তখন বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল। মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে সংযুক্ত ছিলাম। তখন ক্যম্পসে অনেক মেধাবী নেতাদের পেয়েছি। তাদের সংস্পর্শে এই দলের নীতি-আদর্শ আমার মন প্রাণে শক্ত অবস্থান সৃষ্টি করে। প্রথমে হল কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলাম। কিন্তু দীর্ঘ দিন কমিটি না হওয়ায় তা আর হয়ে উঠলো না। এর মধ্যে এক-এগারোর কালো অধ্যায় চলে আসে। রাজনীতিতে এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা চলে আসে। ক্যাম্পাস-কেন্দ্রিক রাজনীতি চালিয়ে যাই। কিন্তু আমাদের জন্য ২০১০ সালের পর ক্যম্পাসে অবস্থান করা কঠিন হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সাথে সাথেই মধুর ক্যন্টিনে ছাত্রদলের যাওয়া নিষিদ্ধ করে প্রথমে। ২০১০ সালের ২১ জুন, তখন টুকু-আলিম কমিটি আর বিশ্ববিদ্যালয়ে মতিন-নাসির কমিটি; আমরা মধুর ক্যন্টিনে যাই, ছাত্রলীগের ওই সময়ের নেতারা এসে বলে তোদের তো আসতে নিষেধ করা হয়েছে, এর পরেও কেন আসছো, বলেই আমাদের পেটানো শুরু করে দেয়। ক্যান্টিনের চেয়ার দিয়ে আমাদের পেটানো শুরু করে। ওই সময় আমার ডান হাতের কলারবোন ভেঙ্গে যায়। এরপর আর ক্যাম্পাসে আমরা ঢুকতে পারিনি। আমি স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে ভর্তিও হতে পারিনি ঢাবি’তে। পরে অবশ্য সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে এলএলবি পাস করি। তখনও আমি কারাগারে বন্দি ছিলাম। বন্দি অবস্থাতেই কারাগারে বসে এলএলবি পরীক্ষা দিতে হয়েছে। এরপর অজস্র বার হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। আসলে এর সঠিক কোনো হিসেব আমি বলতে পারবো না।

বাংলা আউটলুক : এমন কোনো ভয়াবহ নির্যাতন বা হামলার ঘটনা আছে যা আপনি কোনো দিন ভুলতে পারবেন না?

সাজিদ হাসান : আছে, মনে পড়লে এখনো গলা শুকিয়ে আসে। আমি বেঁচে আছি তাও বিশ্বাস হয় না- ওই ঘটনা মনে পড়লে। ২০২৩ সালের ২৮ জুলাই ঢাকায় বিএনপির একটি বিক্ষোভ সমাবেশ ছিল; পরের দিন ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশ মুখে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি ছিল। সকাল ১১টায় আমাদের অবস্থান নেওয়ার কথা ছিল। আমার দায়িত্ব ছিল গাবতলীতে। আমি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাবতলি খালেক পেট্রোল পাম্পের সামনে গেলাম। দেখলাম প্রচুর পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ঘিরে আছে। সাথে স্থানীয় যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের লোকজন লাঠি, রাম দাসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঘিরে রেখেছে আমাদের স্পটটি। আমার কাছে নির্দেশনা আসলো, স্পট একটু পরিবর্তন করে গাবতলি বাসস্ট্যান্ডের দিকে যেতে। দেখলাম পথে আওয়ামী লীগের কর্মীরা সশস্ত্র অবস্থায় মিছিল করছে, সাথে পুলিশও আছে। একটু দূরে গলিতে দেখলাম আমাদের একটি মিছিল আসছে। আমি সেই মিছিলে যোগ দেই। একটু এগুতেই আওয়ামী লীগের লোকজন বৃষ্টির মতো ঢিল ছুড়তে শুরু করে। আমাদের কয়েক জন আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। পেছন থেকে একজন এসে আমার ঘাড়ের ওপর সজোরে আঘাত করে। আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। ওরা আমাকে ধরে নিয়ে যায়।

বাংলা আউটলুক : কোথায় নিয়ে গেল?

সাজিদ হাসান : পাশেই একটি টিনের ঘর ছিলো, একটি গোডাউনের মতো। সেখানে নিয়ে গিয়ে লাঠি, লোহার রড, বাস পরিষ্কার করার লোহার তারকাটা যুক্ত ডাস্টার, হাতুড়ি এগুলো দিয়ে আমাকে ইচ্ছামতো পেটায়। আমার সমস্ত শরীরে ইঞ্চি ইঞ্চি করে পেটয়া। আমার ডান পা থেঁতলে দেয়। ওদের অনেকেই বলছিল, “ওকে মেরে ফেল”। আমিও ধরে নিয়ে ছিলাম, এখান থেকে আর রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে না। আমার আম্মার কথা মনে হচ্ছিল, ভাইদের কথা মনে হচ্ছিল। বোনের কথা। আমার কাছের যারা তাদের কথাও বার বার মনে হচ্ছিল। আমার শুধু এতটুকু খেয়াল ছিল যে, আমার মাথাটা বাঁচাই। এর পর যদি আল্লাহ হায়াত রাখে বাঁচবো, ওইটুকুর মধ্যেই হাত দিয়ে আমি বার বার মথাটা সেভ করছিলাম। আমি নিজেই দেখছিলাম, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে ওরা আমার ডান পা থেঁতলাচ্ছিল। আর ফোনে কাকে যেন বলছিল, “পাইছি, ওকে মেরে ফেলতে হবে, ওই স্থানে একটি বেড়ার ঘরের মতো ছিল। বলছিল, ভেতরে নিয়ে মারতে হবে, বাইরে মিডিয়া আছে”। আমাকে ওই ঘরের ভেতরে টেনে নিয়ে গেল। ভেতরে নিয়ে আবারও মারতে শুরু করলো।

বাংলা আউটলুক : ওই সময় ওরা কিছু বলেনি?

সজদ হাসান : বলেছে, “দল চেঞ্জ করবি, ক্ষমতায় আসবি না? মিছিল করতে আসছো?” এই বলে আবারও লাথি, ঘুষি, চড় মারছিল। যে যেভাবে পেরেছে মেরেছে। এরই মধ্যে একজন বললো, “এটার অবস্থা খারাপ, আর মারিস না”। আমি দেখলাম হাতুড়ির আঘাতে আমার পা হাঁটুর নিচ থেকে সরে গেল। আমার কিছুই করার ছিল না। আমার পায়ের চেয়ে জীবন বাঁচানোই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। পা যাক, আল্লাহ যেন আমাকে বাঁচিয়ে রাখে, এই দোয়াই পড়ছিলাম। একজন বললো, “ওকে ফেলে রাখ, আর মারার দরকার নেই”। অপর একজন বললো, মিডিয়া আসছে। তখন ওরা বললো, “ফেলে রাখা যাবে না, চল ওকে পুলিশে দেই”।

বাংলা আউটলুক : এরপর কি পুলিশে দিল?

সাজিদ হাসান : না। আমাকে ওরা বললো, এই হাঁট। আমি বললাম, আমি হাঁটতে পারবো না। আমি যখন পা ফেললাম দেখলাম আমার পা সরে যাচ্ছে। ডান পাটা ঝুলে গেছে। হাঁটতে পারবো না বলায়, ওরা আমাকে গালাগালি শুরু করলো। অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিতে শুরু করলো, আমার মা, বাবা, আমার দলের চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন সবাইকে নিয়ে। ওরা বললো, তাও তুই হাঁট। আমি যখন ওদের ঘাড়ে ভর করে দাঁড়ালাম, দেখলাম আমার হাঁটুর নিচ থেকে ডান পায়ের অংশটুকু ঝুলছে। বললাম, ভাই আমাকে একটু পানি খাওয়ান, অমনি কয়েক জন আমার মুখে থু থু দিল। তোকে পানি খাওয়াবো না, তোকে পানি খাওয়ানোর জন্য এখানে আনছি? বলে আমাকে গালি দিল। এরপর ওরা দু’জন আমাকে কাঁধে তুললো, ঝুলে থাকা পা মাটিতে গড়াচ্ছে, জোর করে হাঁটাচ্ছে, আর আমাকে মারছে। বুকের ওপর জোরে জোরে লাথি মারতে লাগলো, বাঁশ দিয়ে মারতে মারতে আমাকে নিয়ে যাচ্ছিল। আমার ভাঙ্গা পায়ের ঝুলে থাকা অংশ ধরে ওরা কয়েক জন মোচড়াচ্ছিল। আমি হামাগুড়ি দিয়ে পুলিশ বক্সে ঢুকি। মনে করেছিলাম, এইবার হয়তো বেঁচে যাব। কিন্তু, না। পুলিশের সামনেই আমাকে মারতে লাগলো। পুলিশও ওদের সাথে মারতে শুরু করলো। এভাবে প্রায় ত্রিশ মিনিট মারলো। আমার মনে হচ্ছিল ধীরে ধীরে আমি মরে যাচ্ছি। আমি নিথর, প্রায় নিস্তব্ধ। কানে আসছে “স্যার ওর অবস্থা ভাল না। দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। মারা যেতে পারে”। আমি পুরোপুরি জ্ঞান হারাইনি। আমি পুলিশের কাছে পানি চাইলাম, কিন্তু পানি দিল না। বললো, তোকে পানি দেওয়া যাবে না। ওরা আমাকে গ্রেফতার করলো। আমার কানে প্রচণ্ড আঘাত করেছে, কিছুই শুনছিলাম না।  

বাংলা আউটলুক : এরপর কী হলো?

সাজিদ হাসান : পুলিশ আমাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেল। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে জানানো হলো আমার স্বজনদের। কিন্তু সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ডাক্তার আমাকে দেখে পুলিশকে জানালো, “পেসেন্টের অবস্থা ভাল না, যে কোনো সময়, অঘটন ঘটতে পারে”। পুলিশ ওদের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের জানালো। তখন পুলিশ আমার এক স্বজনের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে দ্রুত হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গেল। আমি তখন সম্পূর্ণ অজ্ঞান।

বাংলা আউটলুক : এখানেই কী পরে চিকিৎসা নিলেন?

সাজিদ হাসান : সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আমার পায়ের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে পাঠায়। আমার তখন কোনো সেন্স ছিল না। সেখানে আমার মাথায় এমআরআইসহ বিভিন্ন পরীক্ষা শেষে আবারো পঙ্গু হাসপাতালে পাঠায়। ডাক্তাররা বললেন, পায়ের যে অবস্থা দেরি করলে, পাটা আর রক্ষা করা যাবে না। কেটে ফেলতে হবে। পঙ্গু হাসপাতালের এই চিকিৎসা যখন চলছিল, তখনো আমার পরিবারের কাউকে জানানো হয়নি। এরপর আমাকে পঙ্গু হাসপাতালে ৪৩ দিন চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এখনো আমি ডান পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারি না। হাঁটতে পারি না।

বাংলা আউটলুক : সেই ঘটনায় কী আপনার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল?

সাজিদ হাসান : জানি না। আমি তো হাসপাতালে ছিলাম। এখনো আমি চিকিৎসারতই।  

বাংলা আউটলুক : এই ঘটনায় পা ছাড়া আর কী কী সমস্যা বোধ করছেন?

সাজিদ হাসান : পা আর ঠিক হবে কী না আমি জানি না। এখনো হাঁটুতে দু’টি অপারেশন করাতে হবে। ডান পায়ের কয়েকটি লিগামেন্ট কিছুটা অকেজো হয়ে আছে। এগুলোর অপারেশন করানো জরুরি। মাথায় এখনো সমস্যা আছে। কানের আঘাত রয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, আমি এখনো ঘুমাতে পারি না। আমার ঘাড়ের ওপর এখনো আঘাত আছে। এছাড়া, একটু চোখ বন্ধ করলেই মনে হয়, এই বুঝি আমাকে মেরে ফেলার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

বাংলা আউটলুক : রাজনীতি করতে গিয়ে আর কোন কষ্ট এখনো কাঁদায়?

সাজিদ হাসান : ২০১৭ সালে আমি যখন পল্টন থানায় গ্রেফতার হই। ওই দিন আমি আমার মাকে হাসপাতালে ভর্তি করে রেখে গেছিলাম। সেখানে গিয়েই আটক হই। থানায় গিয়ে মায়ের জন্য ভীষণ মন খারাপ হয়েছে। এখনো সেই ঘটনা মনে পড়লে কষ্ট হয়।

বাংলা আউটলুক : এছাড়া আর কতবার হামলার শিকার হয়েছেন?

সাজিদ হাসান : বেগম খালেদা জিয়াকে যে দিন কারাগারে পাঠায়, ওই দিন বকশিবাজারে যুবলীগ, ছাত্রলীগের হামলায় আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে ছিলাম। পুলিশ আমাকে লাথি দিয়ে রাস্তার সাইডে ফেলে রেখে গিয়েছিল। মনে করেছিল, আমি মরে গেছি। পরে ওই এলাকার এক বৃদ্ধা আমাকে উদ্ধার করে শান্তিনগরে আমার এক বন্ধুর কাছে আমাকে পৌঁছে দেন। সেই দিনের কথাও আমাকে কাঁদায়। বেগম খালেদা জিয়াকে আমার সামনে থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হলো আমরা কিছুই করতে পারলাম না। 

বাংলা আউটলুক : এত কিছুর পরও কেন রাজনীতিতে আছেন?

সাজিদ হাসান : মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় হয়। যারা রাজনীতি করে, তাদের স্বপ্নটাই তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখে। হয়তো সারা জীবনে কিছুই পাবো না। কিন্তু বিবেকের কাছে দায়মুক্ত থাকবো- এই দেশের জন্য, মানুষের অধিকারের জন্য আমি লড়েছি। হয়তো আমি সফল হইনি, কিন্তু সফল একদিন ঠিকই হবো। সেই স্বপ্নেই বাঁচি। এই রাজনীতির সাথে, এই দলের সাথেই বাঁচতে চাই।

বাংলা আউটলুক : আপনাকে ধন্যবাদ।

সাজিদ হাসান: বাংলা আউটলুককেও ধন্যবাদ। মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে, বঞ্চিত মানুষের আশ্রয় হোক বাংলা আউটলুক।

 

 

 

 

 

 

                          

ছাত্রদল কখনও ব্যর্থ হয়নি : নাছির পরবর্তী

ছাত্রদল কখনও ব্যর্থ হয়নি : নাছির

কমেন্ট

6090 Dawson Blvd, Suite H, Norcross, GA, United States, Georgia [email protected]