আওয়ামী লীগের বাইরে কোনো দলকে সরকার টিকতে দেবে না : জিএম কাদের



আওয়ামী লীগের বাইরে কোনো দলকে সরকার টিকতে দেবে না : জিএম কাদের

জিএম কাদের মনে করেন, সরকার জাতীয় পার্টিকে ভেঙে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছে। রওশনপন্থীদের সম্মেলন করার সুযোগ করে দিচ্ছে। বর্তমানে দেশে একটি দলের বাইরে গিয়ে রাজনীতি করার কোনো পরিবেশ নেই। স্বৈরশাসন চলছে। আওয়ামী লীগের বাইরে কোনো দলকে সাংগঠনিক ভাবে রাজনীতি করতে দেওয়া হচ্ছে না। বাংলা আউটলুকের সঙ্গে চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বাংলা আউটলুকের ঢাকা প্রতিনিধি।

বাংলা আউটলুক : সম্প্রতি আপনাকে বাইরে রেখে রওশন এরশাদকে নিয়ে জাতীয় পার্টির একটি অংশ সম্মেলন করলো, সেখানে একটি কমিটিও ঘোষণা করা হলো; বিষয়টি আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?

জিএম কাদের : এর কোনো ভিত্তি নেই। এটি সরকারের সহযোগিতায়ই হচ্ছে। তাদের সেই কমিটির চিঠি নির্বাচন কমিশনও গ্রহণ করেনি। আমি এগুলো আমলে নিচ্ছি না। যারা এগুলো করছে, তাদের অনেককে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। অনেককে বহিষ্কারও করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও একটি পক্ষ পার্টি ভেঙে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে। এর পেছনে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা আছে।

বাংলা আউটলুক :  আপনারা তো সরকারের সাথেই আছেন, তারপরও সরকার কেন জাতীয় পার্টি ভেঙে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করবে?

জিএম কাদের : একটি দল ছাড়া আর কোনো দলকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতি করতে দিতে চায় না সরকার। আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল এখানে থাকুক সেটা এই সরকার চায় না। সম্পূর্ণ একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করতে যা যা প্রয়োজন সরকার সবই করছে। সাংগঠনিকভাবে জাতীয় পার্টির ওপর জনসমর্থন এখন শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। কর্মী সংখ্যা কমে গেছে। তার পরও আমরা চেষ্ট করছি দলকে বাঁচিয়ে রাখতে।

বাংলা আউটলুক : এই চাপ কী শুধু দেশের ভেতর থেকে না বাইরেরও কোনো চাপ আছে?

জিএম কাদের : না, দেশের বাইরের কোনো চাপ নেই। ভেতরের চাপটাই বেশি। সরকারের কথার বাইরে গেলে, দল ভেঙে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমাদের দলের একটি অংশ তো সরকারের সাথে হাত মিলেয়েই বসে আছে। দেখেছেন না, ক’দিন আগে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিট মিলনায়তন ভাড়া করে সম্মেলন পর্যন্ত করে ফেললো। এটি রওশন এরশাদের কাজ না। তিনি আমাকে বলেছেন, দল বাঁচাতে হলে আপনাকেই (জিএম কাদের) বাঁচাতে হবে। অন্য কারো হাতে গেলে এটি শেষ হয়ে যাবে। রওশন এরশাদ মানসিক এবং শারীরিকভাবে চরম অসুস্থ। ওই গ্রুপটি তাকে (রওশন) যে ভাবে করাচ্ছে তিনি সে ভাবেই করছেন। রাজনীতিতে রওশন এরশাদের নিজের কোনো ভ্যালুও তো তৈরি হয়নি। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী, এর বাইরে রওশন এরশাদ আর কিছুই নন। দ্বাদশ নির্বাচনে দলগতভাবে আমরা চেয়েছিলাম নির্বাচনে যাব না। কিন্তু পেরেছি? পারিনি কারণ একটি গ্রুপ আগে থেকেই নির্বাচনে গিয়ে বসে ছিল। আমার ওপর প্রচণ্ড চাপ দেওয়া হয়েছে। দল বাঁচাতে গেলে আমার আপোষ করার বাইরে কিছু করার ছিল না। এখনও তাই।

বাংলা আউটলুক : তার মানে সরকারের সাথে আপোষ করেই জাতীয় পার্টি রাজনীতি করছে?

জিএম কাদের : এর বাইরে গিয়ে আমার দল টেকানো কঠিন হয়ে যেত। দেশে এখন একদলীয় শাসন চলছে। আওয়ামী লীগের বাইরে আর কোনো রাজনৈতিক দলকে সরকার টিকতে দেবে না। দেশে আইন আছে, শাসন আছে। কিন্তু আইনের শাসন নেই। আইন প্রয়োগ করা হয়, সরকারের সমালোচনা ঠেকানোর কাজে। স্বৈরশাসন চলছে। এর বাইরে গিয়ে কেউ টিকে থাকতে পারবে না। জনগণের কথা চিন্তা করে সরকারের দুঃশাসনের সমালোচনা করেছি, সে জন্যই পরিকল্পিতভাবে আমার দলটি ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

বাংলা আউটলুক : আপনাদেরকে সরকারের গৃহপালিত বিরোধী দল বলা হয়; এখান থেকে বের হয়ে আসার কোনো পরিকল্পনা আছে?

জিএম কাদের : আমারা তো বের হয়েই এসেছি। আমরা সরকারের কোনো কাজের সাথে নেই। কিন্তু আমাদের বের হয়ে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের আটকে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের কোনো রাজনীতি আর কর্মকাণ্ড গৃহপালিত দলের মতো নেই। যারা সরকারের সাথে গৃহপালিত হয়ে থাকতে চাচ্ছে, তারাই সরে গিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল করতে চাচ্ছেন। আমাদের ভেতরের একটি পক্ষ সরকারের সাথে কাজ করছে; এবং দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। 

বাংলা আউটলুক : আপনার বক্তব্য অনুযায়ী অটোক্রেটিক সরকারের জিম্মিদশা থেকে বের হওয়া উপায় কী? আপনার ভূমিকা কী?

জিএম কাদের : এখান থেকে উত্তরণের একটাই উপায়, ধীরে ধীরে ডেমোক্রেটিক সিস্টেমের দিকে যেতে হবে। গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে হবে। আমাদের লড়াইটা কেমন হবে, সেটা ভবিষ্যতের কথা, এখনই বলা যাবে না। তবে, আমারা চেষ্টা করবো জনগণের অধিকারের কথা তুলে ধরার জন্য। যতটুকু আমাদের পক্ষে সম্ভব, আমরা করবো। তবে, সফলতা-দুর্বলতা এটা ভবিষ্যৎ বলতে পারবে। আমরা এককভাবে তো আর পারবো না, দেশের জনগণকে আমাদের সাথে থাকতে হবে। অন্যান্য রাজনৈতিক দল থাকতে হবে। আস্তে আস্তে এগুলো আসবে। আমরা হয়তো একটা শক্তি, অন্য শক্তিগুলোকেও জোটবদ্ধ হতে হবে।

বাংলা আউটলুক : অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে কী বর্তমান নানান ইস্যুতে আন্দোলন করার চিন্তা আছে?

জিএম কাদের : আন্দোলন বলতে কী বোঝা যায়? আন্দোলনের স্পেস তো নেই। বিবৃতি দিচ্ছি। কিন্তু রাস্তায় গিয়ে যদি মিছিল-মিটিং করি তাতে কি এসবের ফলপ্রসূ কোনো সমাধান আসবে। এখন তো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডই স্বাভাবিকগতিতে চলাতে পারছি না। আওয়ামী লীগ ছাড়া গণভিত্তি আছে এমন কোনো রাজনৈতিক দল নিজস্ব ভিত্তি নিয়ে টিকে থাকতে পারবে কি না এটা নিয়ে শঙ্কা আছে। স্বাভাবিক রাজনীতিও একটা অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে। সরকারের বা বিরোধী রাজনৈতিক দলের একটা স্পেস দরকার, এধরনের কোনো পরিস্থিতি তো আমরা দেখছি না। মানুষের যখন হতাশা এসে যায়, তখন স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিবেশ থাকে না। মানুষ চরমপন্থা বা উগ্রপন্থার দিকে মানুষ ঝুঁকে পড়ে। দেশে স্বাভাবিক রাজনীতির পরিবেশ অনিশ্চিত হয়ে গেছে।

বাংলা আউটলুক : এই পরিস্থিতি দেশের জন্য কতটা ভয়ঙ্কর বলে মনে করছেন?

জিএম কাদের: মানুষের যে নিজস্ব অধিকার, দেশের মালিকানার দাবি, সেটার মধ্যেই ঘাটতি হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। এটাই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর।

বাংলা আউটলুক :  আপনাকে ধন্যবাদ।

জিএম কাদের: বাংলা আউটলুককেও ধন্যবাদ।

ক্ষমতাসীনদের হাতে আমরা আটকে গেছি : কাজী ফিরোজ রশিদ পরবর্তী

ক্ষমতাসীনদের হাতে আমরা আটকে গেছি : কাজী ফিরোজ রশিদ

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর

6090 Dawson Blvd, Suite H, Norcross, GA, United States, Georgia [email protected]